শনিবার সকালে সারা দেশের নজর ছিল সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রের বাজেটের দিকে। সবার দৃষ্টি ছিল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের উপর। বাজেট পেশের পূর্ব মুহুর্তে, তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নির্মলা সীতারামনকে ‘দই এবং চিনি’ পরিবেশন করেন । এটি দীর্ঘকালীন ভারতীয় রীতির অংশ হিসেবে অগ্রগণ্য করা হয়ে আসছে।
জানা যাক এই প্রথার তাৎপর্য এবং গুরুত্ব।
রাষ্ট্রপতির এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী এবং তার দলের কাছে বাজেট উপস্থাপনার জন্য শুভেচ্ছা জানান।” এর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎতের কিছু ছবি শেয়ার করা হয়। পরবর্তী পোস্টে বলা হয়, “কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, রাজ্য মন্ত্রী শ্রী পঙ্কজ চৌধুরী এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সাক্ষাৎ করতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলেন।”
এই প্রথার গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় পরিবারগুলোতে দীর্ঘকাল ধরে ‘দই চিনি’ খাওয়ার প্রথা চলে আসছে। বিশেষ করে, পরীক্ষার দিন সকালে মায়েরা তাদের সন্তানদের দই এবং চিনি পরিবেশন করে। এটি এক ধরনের শুভেচ্ছা জানানোর পন্থা। যা সন্তানদের মনের শান্তি এবং সফলতার জন্য দেওয়া হয়। এই রীতি শুধুমাত্র পরীক্ষার সময় নয়, বরং যেকোনো নতুন কাজ শুরু করার আগে বা দীর্ঘ সফরে যাওয়ার আগে পালন করা হয়।
এই প্রথা অনুযায়ী দই এবং চিনি মিশ্রিত খেলে মানসিক অবসাদ কমে। মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এটি মঙ্গলকামনা এবং সফলতার জন্য একটি প্রথাগত উপায় হিসেবেও পরিগণিত হয়ে আসছে।
জ্যোতিষশাস্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি
জ্যোতিষশাস্ত্রের মতে, দই চন্দ্রগ্রহের শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে, যা মন এবং শান্তির মধ্যে সমন্বয় আনতে সহায়ক। দইয়ের শীতলতা এবং স্থিতিশীলতা শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে চিনি শুক্র গ্রহের প্রতীক, যা সমৃদ্ধি, সৌহার্দ্য এবং উন্নতির গ্রহ হিসেবে পরিচিত। এই দুটি উপাদানের মিশ্রণ শরীর ও মনের জন্য ভারসাম্য এবং শান্তি আনে, যা নতুন কাজ বা পরীক্ষা সামনে থাকলে উপকারী।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি
দই পেটে ঠাণ্ডা প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে এবং দ্রুত শক্তি প্রদান করে। দই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, মিল্ক প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন B-2, ভিটামিন B-12 এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস। এটি মেটাবলিজম উন্নত করে, এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
আয়ুর্বেদ অনুসারে দই চিনির প্রয়োজনীয়তা
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী দইকে ‘কপ্হ-বার্ধক’ বলা হয়, কারণ এটি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। গরমের সময় দই এবং চিনি মিশিয়ে খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এটি শরীরের অবসাদও কমায়। চিনি শরীরে দ্রুত শক্তির যোগান দেয়, যা মানসিক প্রশান্তি এবং একাগ্রতা বাড়ায়। আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই মিশ্রণ স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর এই প্রথা অনুসরণ করা একটি ঐতিহ্য যা শুধুমাত্র ভারতীয় পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি বৃহত্তর সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রতিস্থাপন হয়েছে। এটি ভারতীয় জনগণের কাছে মনোযোগ, সৌভাগ্য এবং সফলতার জন্য একটি শুভ আর্শীবাদ হিসেবে গণ্য হয়। বাজেট উপস্থাপনার সময় এই রীতি পালন করা, এমনকি রাজনৈতিক দৃশ্যে, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি উদাহরণ।