নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুর ভাষণের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হতে চলেছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। প্রথম দিনেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্কের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ একাধিক বিষয় নিয়ে সুর চড়াতে পারে বিরোধীরা৷
এবারের বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে জোরালো অবস্থান নিতে চলেছে৷ যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল, প্রয়াগরাজে মহা কুম্ভ মেলায় পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু এবং আরও কিছু সাংবিধানিক ইস্যু।
বাজেট সেশনের ১০ মূল দিক:
প্রেসিডেন্টের ভাষণ
সেশন শুরু হবে শুক্রবার সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুর ভাষণের মাধ্যমে। এই ভাষণ সাধারণত সরকারের কর্মকাণ্ডের সারসংক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা উপস্থাপন
রাষ্ট্রপতি ভাষণের পর, দুপুর ১২টায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৫ লোকসভায় উপস্থাপন করবেন। পরে এটি রাজ্যসভাতেও জমা দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি পর্যালোচনা ও ভবিষ্যতের জন্য পরামর্শ প্রদান করে।
বাজেট পেশ
১ ফেব্রুয়ারি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবেন। এটি তার অষ্টম বাজেট পেশের ঘটনা হবে। বাজেটে বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আর্থিক পুনরুদ্ধারের বিষয়গুলি আলোচনায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিরোধী দলগুলোর দাবি
বাজেট অধিবেশনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে আলোচনার দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে যে বিষয়গুলি-
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল: এই বিলটি কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে পারে, যা বিরোধীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মহা কুম্ভ মেলা-এ পদদলিত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু: বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে সাধারণ তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার তুলনায় ভিআইপিদের জন্য অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অল-পার্টি মিটিংয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা
বাজেট সেশনের আগে এক অল-পার্টি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিরোধী দলগুলো সরকারের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করে থাকে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টারি কমিটিগুলোর রাজনীতি এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর তুলনায় বিরোধী রাজ্যগুলিতে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তোলেন।
বিরোধীদের প্রতিবাদ
বিরোধী দলগুলো সরকারের প্রাথমিক আলোচনা ক্যালেন্ডার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে, তারা দাবি করেছে যে এটি সংসদীয় প্রথার বিরুদ্ধে। তাদের মতে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ব্যবসা পরামর্শ কমিটি (BAC)-এর মাধ্যমে নেওয়া উচিত।
রাজ্যসভার উত্তেজনা
কিছু সংসদ সদস্য রাজ্যসভা চেয়ারম্যান জগদীপ ধানখরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, দাবি করে যে তিনি বিরোধী সদস্যদের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন না। এর আগে শীতকালীন অধিবেশনে তার বিরুদ্ধে একটি অভিসংশন প্রস্তাব বাতিল করা হয়, যা উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
সেশন দুই পর্বে
বাজেট অধিবেশন দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এরপর দ্বিতীয় পর্ব ১০ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
বিলের তালিকা
সরকার ১৬টি বিল উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিল হলো:
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল।
ব্যাংকিং আইন (সংশোধনী) বিল।
রেলওয়ে (সংশোধনী) বিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (সংশোধনী) বিল।
তেলক্ষেত্র (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) সংশোধনী বিল।
ইমিগ্রেশন বিল
একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিল হলো ইমিগ্রেশন ও বিদেশী আইন, যা প্রধানমন্ত্রী মোদী সরকারের পরিকল্পনায় বিদেশীদের প্রবেশ, প্রস্থান ও অবস্থান ব্যবস্থাপনা সহজতর করতে সহায়তা করবে। এই বিলের মাধ্যমে ভারতে ইমিগ্রেশন পরিষেবাগুলোর আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্য রয়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
এই সব বিষয় সম্পর্কে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, “আমরা বিরোধীদের উদ্বেগ নিয়ে ওয়াকিবহাল এবং ব্যবসা পরামর্শ কমিটি (BAC) সিদ্ধান্ত নেবে কোন বিষয়ে আলোচনা হবে। আমরা আশা করি বাজেট সেশন সফল এবং গঠনমূলক হবে। সকল দলের সহযোগিতা এই সেশনকে অর্থবহ করে তুলবে।”
অর্থাৎ, এবারের বাজেট সেশনটি খুবই উত্তপ্ত হতে পারে, যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনাও তুঙ্গে উঠতে পারে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে একটি শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর সংসদীয় সেশন আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।