রাজ্য সরকারি গাড়ি থেকে প্রচুর নগদ টাকা ও মদ উদ্ধার

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন৷ আর নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে দিল্লি পুলিশের হাতে একটি সন্দেহজনক গাড়ি আটক হয়েছে। গাড়ির উপরে ‘পঞ্জাব সরকার’ (Punjab Government)…

Punjab Government Clarifies After Delhi Police Seizes Cash

short-samachar

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন৷ আর নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে দিল্লি পুলিশের হাতে একটি সন্দেহজনক গাড়ি আটক হয়েছে। গাড়ির উপরে ‘পঞ্জাব সরকার’ (Punjab Government) লেখা ছিল এবং সেটি পঞ্জাবের রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল গাড়ি মনে হতে পারে। তবে দিল্লি পুলিশ গাড়ি তল্লাশি করার সময় খুঁজে পায় মদ ও কয়েক লক্ষ টাকা। এই ঘটনাটি রাজনীতিতে ব্যাপক শোরগোল সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

   

বুধবার রাতে, দিল্লির তিলক মার্গ পুলিশ স্টেশনে একটি সন্দেহজনক গাড়ি সম্পর্কে খবর আসে। গাড়িটির নাম্বার প্লেটে ‘পঞ্জাব সরকার’ লেখা ছিল এবং পঞ্জাব সরকারের নামে কিছু আাম আদমি পার্টির (AAP) প্রচারপত্রও ছিল গাড়ির মধ্যে। তাছাড়া, গাড়ির ভিতরে কয়েকটি মদ বোতল এবং লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার হয়। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, গাড়িটি তিলক মার্গের কাছে পঞ্জাব ভবনের সামনে পার্ক করা ছিল এবং পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে এ সকল জিনিস উদ্ধার করেছে।

এই ঘটনায় পঞ্জাব সরকার অবিলম্বে একটি বিবৃতি জারি করেছে। পঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি “ভুয়া এবং জাল” এবং এটি পঞ্জাব সরকারের কোনো সরকারি কর্মচারীর গাড়ি নয়। পঞ্জাব সরকার আরও জানিয়েছে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর PB35AE1342 এবং এটি একটি ২০১৮ মডেলের ফোর্ড ইকোসপোর্ট গাড়ির জন্য নিবন্ধিত, কিন্তু পুলিশ যে গাড়িটি আটক করেছে তা একটি হুন্ডাই ক্রেটা। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, গাড়ির নম্বর প্লেটটি জাল।

বিজেপির সংসদ সদস্য প্রভীন খণ্ডেলওয়াল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আক্রমণ করেছেন আম আদমি পার্টি (AAP) ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। তিনি বলছেন, “এই ঘটনাটি AAP-এর ঘৃণিত মুখ উন্মোচন করেছে। এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে, দিল্লির AAP সরকার দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে কাজ করছে। তারা দিল্লির জনগণকে ‘আম আদমি’ বলার নামে প্রতারণা করেছে। আমরা আশা করছি যে, দিল্লিতে পরিবর্তন আসবে এবং বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”

এদিকে, AAP-এর জাতীয় মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা কাক্কার এই অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, গাড়ির মালিক আসলে মহারাষ্ট্রের একজন নাগরিক, কিন্তু ভুলভাবে সেটি দিল্লির গাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “পঞ্জাব সরকারও এটি স্পষ্ট করেছে যে, গাড়িটি পঞ্জাব সরকারের নয় এবং এটি পঞ্জাব ভবনের কাছেও কখনো আসেনি।”

পঞ্জাব সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আটক করা গাড়িটি আসলে মেজর অনুভাব শিবপুরি নামে একজন সেনা কর্মকর্তা মালিক। তিনি পঠানকোটের আর্মি ডেন্টাল কলেজে তিন বছর আগে কর্মরত ছিলেন এবং বর্তমানে খড়কি, মহারাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি ফোর্ড ইকোসপোর্টের, তবে পুলিশ যে গাড়িটি আটক করেছে তা হুন্ডাই ক্রেটা সিরিজের। ফলে স্পষ্ট যে গাড়ির নম্বর প্লেটটি জাল ছিল।

এই পুরো ঘটনার সময়, দিল্লি পুলিশ এবং রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। এমনকি অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই ধরনের ঘটনা নির্বাচনী সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থে ঘটানো হচ্ছে। দিল্লির ভোটের আগে এমন ঘটনা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

এদিকে, দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিলক মার্গ পুলিশ স্টেশন ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং মামলাটি সম্পূর্ণরূপে তদন্ত করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেহেতু গাড়ির নম্বর প্লেট জাল ছিল এবং এটি কোনো সরকারি গাড়ি নয়, সেহেতু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল—AAP, BJP এবং কংগ্রেস—মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। এই ধরনের ঘটনাগুলি নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের জন্য একটি বড় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগ এবং রাজনৈতিক আক্রমণগুলি ভোটের সময় জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে।

অবশেষে, এই ঘটনাটি পঞ্জাব সরকার এবং AAP-এর জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, তবে পঞ্জাব সরকার ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছে যে, তাদের কোনও সম্পর্ক নেই ওই গাড়ির সাথে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচনের পর এই ঘটনাটি কীভাবে প্রভাব ফেলবে দিল্লির ভোটের ফলাফলে।