বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম তারকা নেইমার জুনিয়র (Neymar Jr)। যিনি একসময় ব্রাজিলের ফুটবল (Brazil Football) জগতের তারকা হয়ে উঠেছিলেন, বর্তমানে তিনি ক্যারিয়ারের এক নতুন অধ্যায়ে পা রাখতে চলেছেন। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সৌদি আরবের ক্লাব (Saudi Club) আল হিলালে (Al-Hilal) যোগ দেওয়ার পর, চোটের কারণে খুব বেশি খেলার সুযোগ পাননি ব্রাজিলিয়ান এই তারকা (Brazilian Star)। ১৮ মাস পর আল হিলালের সঙ্গে তাঁর চুক্তি শেষ হয়েছে। তারপরই নেইমার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে ফিরবেন নিজের ছোটবেলার ক্লাব সান্তোসে (Santos FC)। কারণ ২০২৬ বিশ্বকাপেই শেষ বারের মত খেলতে নামবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন তিনি।
Al Hilal and Neymar Jr. have agreed to terminate the player’s contract by mutual consent.
Thank you and good luck,Neymar 💙 pic.twitter.com/9edCVWBGop
— AlHilal Saudi Club (@Alhilal_EN) January 27, 2025
নেইমারের আল হিলাল ছেড়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল তাঁর বারবার চোট পাওয়া। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার ম্যাচে এসিএল ইনজুরিতে আক্রান্ত হন তিনি। যা তাকে প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য করেছিল। পরবর্তী সময়ে কিছু ম্যাচ খেললেও, শরীরের নানা সমস্যা তাঁকে পুনরায় চোটে ফেলে এবং চূড়ান্তভাবে তিনি আল হিলালের জার্সি ছেড়ে সান্তোসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সান্তোসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
নেইমারের ১৮ মাসের সৌদি যাত্রা ছিল চ্যালেঞ্জের। আল হিলালে যোগ দেয়ার সময়ই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল নতুন এক অধ্যায়ের শুরু, তবে বারবার চোটের কারণে সে সম্ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সান্তোসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে নতুন আশা জাগিয়েছে। সান্তোসে ফিরে তিনি নিজের ফর্ম পুনরুদ্ধার করতে চান, এমনকি সেখানেও তিনি কম বেতনে খেলবেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানা গিয়েছে। ক্লাবটি সম্প্রতি ব্রাজিলের শীর্ষ ডিভিশনে উঠে এসেছে, যা নেইমারের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
সান্তোসের সঙ্গে নেইমারের সম্পর্ক
নেইমারের পেশাদারি ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল সান্তোসে। মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি এই ক্লাবের যুব দল থেকে ফুটবল খেলতে শুরু করেন এবং ২০১০ সালে সান্তোসের হয়ে পেশাদারি ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০১৩ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার আগে সান্তোসের হয়ে ২২৫ ম্যাচে ১৩৬ গোল এবং ৬৪ অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। তাঁর এই পারফরম্যান্সই তাঁকে বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল তারকাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বর্তমানে সান্তোসে নেইমারের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন এক সুযোগ। বর্তমনে ক্লাবের সর্বোচ্চ বেতনভুক্ত খেলোয়াড়ের সাপ্তাহিক আয় প্রায় ২৪ হাজার ইউরো, যা নেইমারের দৈনিক আয় থেকেও অনেক কম। তবে এসব বিষয় মোটেও তাঁর সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব ফেলেনি। নেইমারের জন্য এটা ছিল তাঁর ক্যারিয়ার বাঁচানোর এবং নতুন করে ফর্মে ফিরে আসার এক বিশাল সুযোগ।
কেরিয়ারের পরবর্তী পদক্ষেপ
নেইমার জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য এখন ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ। তিনি বলেন, “এটি হবে আমার শেষ বিশ্বকাপ, আমার শেষ সুযোগ। আমি সবকিছু করব, যাতে সেখানে খেলতে পারি।” ব্রাজিলের হয়ে ১২৭ ম্যাচে ৭৯ গোল করা নেইমার বিশ্ব ফুটবলে এক অনন্য অবস্থানে রয়েছেন। সান্তোসে ফিরে তিনি নিজের ফর্ম পুনরুদ্ধার করতে চান এবং শারীরিকভাবে আরও প্রস্তুত হয়ে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিতে চান।
এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনারও শিকার হতে হয়েছে নেইমারকে। অনেকেই পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষত, প্যারিস ছাড়ার পর সৌদি ক্লাবে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়েও বিতর্ক ছিল। তবে এসব সমালোচনা গুরুত্ব না দিয়েই নেইমার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের শেষে তিনি খেলবেন সেই ক্লাবে, যেখানে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
যদিও নেইমার সান্তোসে ফিরে গেছেন। ইউরোপিয়ান ফুটবল কি তার কাছে পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে, তা সময়ই বলবে। তাঁর বয়স ৩২ বছর, এবং ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে তিনি নতুন চ্যালেঞ্জে নিজেকে প্রমাণ করতে চান। সান্তোসে খেলার মাধ্যমে তিনি নিজের ফর্ম ফিরে পেতে এবং ক্যারিয়ারকে এক সম্মানজনক পরিণতি দিতে চান।
বিশ্ব ফুটবলকে তিনি যে বড়সড় অবদান রেখেছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বার্সেলোনা, পিএসজি, এবং ব্রাজিলের হয়ে অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরির পর, এখন তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে সান্তোসে ফিরতে চলেছেন এই ফুটবল তারকা। এখন সবার নজর সান্তোসে নেইমারের খেলা দেখার দিকে। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠে নামার সম্ভাবনা থাকলেও, এর আগেই তাঁর ফিরে আসা নিয়ে ফুটবল বিশ্বে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।