রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) মাঠে বাংলার ক্রিকেট (Bengal Cricket) ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখে দিলেন ১৫ বছর বয়সী অঙ্কিত চট্টোপাধ্যায় (Ankit Chatterjee)। কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মাঠে হরিয়ানার বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) রেকর্ড (Record) ভেঙে দিলেন বনগাঁর এই তরুণ ক্রিকেটার। মাত্র ১৫ বছর ৩৬১ দিন বয়সে বাংলা ক্রিকেটে রঞ্জিতে অভিষেক করা অঙ্কিত, যা এখনো পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে নামা ক্রিকেটারের রেকর্ড।
রাজস্থান বধে ‘ভয়ঙ্কর’ লক্ষ্য হাবাসের!
এই রেকর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত এক উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল, যখন অঙ্কিত তার প্রথম রানটি করেন। হরিয়ানার নামী পেসার অংশুল কম্বোজের বিরুদ্ধে কভার ড্রাইভে মেরে তিনি তাঁর প্রথম রানটি তুলে নেন, যা ছিল এক ধরনের সেলিব্রেশনও। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মত বিখ্যাত শটটি খেলেন অঙ্কিত। কাকতালীয়ভাবে, এই শটই ছিল সেই শট, যা সৌরভের জন্য পরিচিত। এর মাধ্যমে অঙ্কিত শুধু রেকর্ড ভাঙলেন, একই সঙ্গে সৌরভের স্মৃতিও জাগিয়ে দিলেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বুমরাহের সম্ভাব্য বিকল্প ভারতের ‘ডিএসপি’
তবে রেকর্ডের এই সাফল্য শুধুমাত্র একটা ম্যাচের অর্জন নয়। এক দীর্ঘ পথচলার ফলস্বরূপ। অঙ্কিতের ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। বনগাঁর এই তরুণ তার কৈশোরেই সাহসী ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার বাবার, অনুপ চট্টোপাধ্যায়ের সহায়তায়, অঙ্কিত নিজের ক্রিকেট প্রতিভাকে শানিত করেছিলেন। বাড়ির পিছনে বিরাট জায়গায় ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়ে তিনি ছোটবেলায় অনেক সময় ব্যাট-বলের সঙ্গে সময় কাটাতেন। তাঁর ক্রিকেট জীবন আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় সোনালি ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পর, যেখানে তিনি শৈশবের কোচ দোলন গোলদারের কাছ থেকে কঠোর প্রশিক্ষণ নেন।
তিন উপায়ে মাঠে ম্যাজিক দেখাবেন বাগানের ‘মাঠের রাজা’
অঙ্কিতের প্রতিভা দ্রুত নজর কাড়ে এবং তিনি বাংলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলে খেলার সুযোগ পান। বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে তিনি বাংলার সর্বোচ্চ স্কোরার হন। এর পরেই তিনি বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সৌরাশিস লাহিড়ীর প্রশিক্ষণে খেলা শুরু করেন। বিনু মাঁকড় ট্রফিতে অসমের বিরুদ্ধে ৭৫ বলে সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট মহলে নিজের পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে ৯টি ছক্কা মেরে এই ইনিংসটি স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
তবে সবথেকে বড় কথা, অঙ্কিতের ক্রিকেটীয় মনোবল। সৌরশিস লাহিড়ী জানিয়েছেন, অঙ্কিতের মধ্যে এক ধরনের ভয়ডরহীন মনোভাব রয়েছে, যা তাকে সব সময়ই নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে উদ্বুদ্ধ করে। কোচবিহার ট্রফিতে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে লাঞ্চের মধ্যেই সেঞ্চুরি করা অঙ্কিতের জন্য যেন এক নতুন দরজা খুলে দিয়েছিল। তাঁর ভয়ের শূন্য মনোভাব তাকে প্রতিনিয়ত নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল রোহিত শর্মার ফোন নম্বর, জানুন কত নম্বর
অঙ্কিতের খেলার ধরণ এবং মনোভাব অনেকটাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো। খেলা কিংবা মাঠে আসার পর তার কৌশল ও শট নির্বাচনের মধ্যে সৌরভের ছাপ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে তার কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী বলেছেন, “অঙ্কিতের মধ্যে সৌরভের মত প্রতিভা রয়েছে। তবে তাকে আরও দীর্ঘ পথ যেতে হবে।” এই মন্তব্যে অঙ্কিতের ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে এক বড় আশা, যেখানে আরও বড় কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
অঙ্কিতের অভিষেকের সুযোগ এসেছিল অভিমন্যু ঈশ্বরণের আঙুলের চোটের কারণে, কিন্তু তার সামনে যখন এই সুযোগ আসে, তখন তিনি নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি স্বাভাবিকভাবেই মাঠে ছিলাম। গতকাল রাতে ভালো ঘুমও হয়েছিল। আমি জানতাম না যে, প্রথম থেকেই আগ্রাসী খেলব। কিন্তু ওই বলে ওই শটটাই খেলার ছিল, তাই মেরেছি।”
দল নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ বাগানের ‘মাঠের রাজা’ পেত্রাতোস!
অঙ্কিতের এই অভিষেক বাংলা ক্রিকেটের জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক তরুণ ক্রিকেটারকে অনুপ্রাণিত করবে। বনগাঁর ছোট্ট ছেলেটি আজ বড় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, যার ফলস্বরূপ বাংলার ক্রিকেটে এক নতুন তারকার উত্থান ঘটল।