‘নেতাজি-মৃত্যু’ নিয়ে বিতর্কিত পোস্টের জেরে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এফআইআর

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের মৃত্যু দিবস নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর ভারতের লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। রবিবার,…

Rahul Gandhi Over Controversial Post on Netaji Subhas Chandra Bose's Death

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের মৃত্যু দিবস নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর ভারতের লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। রবিবার, কলকাতার ভবানীপুর থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে রাহুল গান্ধী তার অফিসিয়াল এক্স (পুরানো টুইটার) অ্যাকাউন্টে নেতাজির জন্মবার্ষিকীতে, ২৩ জানুয়ারি, নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন। ওই পোস্টে রাহুল গান্ধী নেতাজির মৃত্যুর তারিখ হিসেবে ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫ উল্লেখ করেছিলেন, যা নিয়ে দেশের নানা স্থানে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

এই পোস্টে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে দাবি করে কলকাতার ভবানীপুর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার কিছু সদস্য। দলটির নেতারা অভিযোগ করেন যে রাহুল গান্ধী এবং তার পূর্বপুরুষরা প্রায়ই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের স্মৃতিকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন, যা দেশের ইতিহাসের জন্য একটি অপমানজনক বিষয়।

   

অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার অভিযোগ
অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী এই নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, “রাহুল গান্ধী সেই একই পারিবারিক ঐতিহ্য বহন করে, যিনি প্রথম নেতাজিকে কংগ্রেস ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন। রাহুল গান্ধী এবং তার পূর্বপুরুষরা সবসময় নেতাজির স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন, যা ভারতীয় জনগণের কাছে কখনই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা, প্রতিটি প্রয়াসে নেতাজির ইতিহাস এবং স্মৃতিকে রক্ষা করার চেষ্টা করি।”

চন্দ্রচূড় গোস্বামীর মতে, রাহুল গান্ধী যদি তার পরিবারের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকান, তবে তিনি বুঝতে পারবেন যে নেতাজির প্রতি তাদের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব কীভাবে ভারতীয় জনগণের কাছে একটি কষ্টদায়ক বাস্তবতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

নেতাজির মৃত্যু রহস্য
১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্টের যে তারিখ রাহুল গান্ধী পোস্টে উল্লেখ করেছেন, তা মূলত সেই দিন, যখন সাইগন থেকে সোভিয়েত রাশিয়া অভিমুখে যাত্রা করা একটি বিমান, যার মধ্যে নেতাজি ছিলেন, তা বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনার পর নেতাজির মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্য তৈরি হয়েছে, কারণ সেসময়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি যে, নেতাজি আসলেই মারা গেছেন কিনা। এরপর বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল, যা নেতাজির ‘অদৃশ্য’ হওয়া বা মৃত্যু সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে তদন্ত করেছিল, তবে কখনওই কোনো কমিশন ১৮ আগস্ট ১৯৪৫-এর তারিখটিকে মৃত্যুর সঠিক দিন হিসেবে নিশ্চিত করতে পারেনি।

এই নিয়ে বিতর্ক এখনো অব্যাহত, এবং নেতাজির মৃত্যুর সঠিক কারণ বা সময় সম্পর্কিত নানা তত্ত্ব এবং মতবাদ ঘুরপাক খাচ্ছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গবেষণা এবং তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেনি যে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস আসলেই ওইদিন মারা গিয়েছিলেন কিনা, কিংবা তিনি কোথায় এবং কিভাবে মারা গিয়েছিলেন।

রাহুল গান্ধীর পোস্ট এবং সমালোচনা
রাহুল গান্ধী তার পোস্টে ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫ তারিখটিকে উল্লেখ করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। তবে, ঐ পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর তা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের অনুসারী দলগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিশেষ করে, নেতাজির প্রতিষ্ঠিত দল ‘অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক’ এবং পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, পাশাপাশি বিরোধী দল বিজেপি, এই পোস্টের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিয়েছে।

এছাড়াও, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যিনি রাহুল গান্ধীর পোস্টের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “নেতাজির মৃত্যু সম্পর্কে যে ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে তা জাতির জন্য কোনোভাবেই শুভ নয়।”

এফআইআর দায়েরের পর প্রতিবাদ
এফআইআর দায়েরের পর, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার কর্মীরা কলকাতার এলগিন রোডে, যেখানে নেতাজির পুরনো বাড়ি অবস্থিত, সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং দাবি করেন যে নেতাজির মৃত্যুর তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা দেশবাসীর প্রতি একটি অবমাননা। বিক্ষোভকারীরা ‘নেতাজির সঠিক ইতিহাস’ পুনরুদ্ধারের দাবিতে স্লোগান দেন।

ভবিষ্যত পদক্ষেপ
এফআইআর দায়ের হওয়ার পর, এটি দেখা যাবে যে কলকাতা পুলিশ কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এটি কীভাবে আইনগত প্রক্রিয়া চালাতে পারে। রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে এখনও এই ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি, তবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্দেশিত।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের মৃত্যু রহস্য এবং তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতাদের এই ধরনের বিষয় সম্পর্কে সঠিক এবং প্রমাণিত তথ্য প্রদান করা উচিত, যাতে বিভ্রান্তি এবং মতবিরোধের সৃষ্টি না হয়।