অসমে সংখ্যালঘু ছাত্রকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলে চাপ দেওয়া আটক ৪

অসমের (Assam) শিলচরে একটি মারাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চারজন ছেলে আটক হয়েছে, যারা এক সংখ্যালঘু ছাত্রকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার জন্য জোর করে চাপ সৃষ্টি করেছিল।…

Assam police

অসমের (Assam) শিলচরে একটি মারাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চারজন ছেলে আটক হয়েছে, যারা এক সংখ্যালঘু ছাত্রকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার জন্য জোর করে চাপ সৃষ্টি করেছিল। ওই ছাত্র ক্লাস ৮-এ পড়াশোনা করছিল এবং বুধবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে। তারই প্রেক্ষিতে পুলিশ বর্তমানে তদন্ত শুরু করেছে এবং চার যুবককে আটক করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে শিলচরের চন্দ্রপুর এলাকায়, যা কাছাড় জেলার সদর শহর। ওই সংখ্যালঘু ছাত্র, যিনি নরসিং স্কুলের ছাত্র, শিলচরের মধ্যবন্দর এলাকার বাসিন্দা। ছাত্রটি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল, সেই সময় তাকে চারজন যুবক ঘেরাও করে এবং একটি মারধরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ অনুসারে, তারা দাবি করেছে যে, ওই ছাত্র স্কুলের দেওয়ালে কিছু ‘আপত্তিজনক’ কিছু লিখেছিল, যার জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। এরপর তারা ওই ছাত্রকে রাস্তায় মারধর করে, তার কান ধরেই বসিয়ে দেয় এবং তাকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলাতে বাধ্য করে।

   

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনাটি ভিডিও করে ওই যুবকরা সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করে দেয়, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে ওঠে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরই ঘটনার প্রতি সবাই নজর দেয় এবং ছাত্রটির পরিবার চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ এ বিষয়ে একটি মামলা রুজু করেছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আটককৃত চার যুবককে দুপুরে থানায় নিয়ে আসা হয় এবং কিছু সময় পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তবে, ঘটনাটির গুরুত্বকে বিবেচনায় রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে, এই ঘটনার পর, শিলচরের স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যে, এই ধরনের ঘটনা ধর্মীয় বিভাজন এবং সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে, যা সমাজে অশান্তি এবং হানাহানি বাড়াতে পারে। তারা এই ধরনের সহিংসতা এবং ধর্মীয় চাপ-প্রয়োগের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এই ধরনের ঘটনাগুলি সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং একে আটকাতে সরকার ও প্রশাসনকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। অনেকেই বলেছেন, এই ধরনের ঘটনা একদিকে যেমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ, তেমনি এটি দেশের ধর্মীয় অখণ্ডতার পক্ষে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে যে, অভিযুক্ত যুবকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, এ বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় রঙ দেওয়া যাবে না, এই মর্মে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পুলিশ আরো জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার, শিলচরের পুলিশ প্রশাসন একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, “এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, শিলচর শহরে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরনের ধর্মীয় চাপ-প্রয়োগের ঘটনা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। কিছু সমাজকর্মী বলেছেন, “এ ধরনের পরিস্থিতি সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে। পুলিশ এবং প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

এছাড়া, রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশনও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কমিশন তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “ধর্মীয় পরিচয়ে এ ধরনের শত্রুতা বা সহিংসতা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি চাই।”

এখনো পর্যন্ত, ঘটনার সাথে যুক্ত চার যুবককে পুলিশ চিহ্নিত করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা যেহেতু ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করেছিল, তাই তদন্তে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এটি একদিকে যেমন একটি হিংসাত্মক ঘটনা, তেমনি এটি একটি বড় ধরনের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার সংকটও তৈরি করতে পারে। এই ধরনের ঘটনা যদি বেড়ে যায়, তবে তা দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবে। পুলিশের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সমাজে বিভাজন সৃষ্টির এই ধরনের পরিস্থিতি ঠেকানো।