তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হওয়ার পর ফের একবার কোপ পড়ল শান্তনু সেনের (Santanu Sen) ওপর। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পাশাপাশি, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সরকারি পদ থেকেও তাঁকে সরানো হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন শান্তনু সেন (Santanu Sen)। তবে এখন তাঁকে সরিয়ে ওই পদে নতুন প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন অসীম সরকার।
এক সাক্ষাৎকারে শান্তনু সেন (Santanu Sen) বলেন, “দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই শিরোধার্য।” অর্থাৎ, তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। তবে, তাঁর বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কিছু নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা হলেও, শাস্তির কারণ সম্পর্কে কিছুই স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। বিশেষ করে, শান্তনু সেনের (Santanu Sen) দলবিরোধী কাজ কী ছিল, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। এরই মধ্যে তিনি প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে দলের শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বীকার করেছেন, যদিও তিনি নিজেও জানেন না কোন কাজের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকেই শান্তনুর (Santanu Sen) অবস্থান এবং তাঁর ব্যক্তিগত মতামত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। শান্তনু সেন ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়েন। শুধু তিনি নন, তাঁর স্ত্রীও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর পর থেকেই হাসপাতাল প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন এই চিকিৎসক নেতা। আরজি কর পর্বের পর দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে। এরপর, তৃণমূলের মুখপাত্র পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন রোগী কল্যাণ সমিতির তালিকাতেও তাঁকে আর রাখা হয়নি।
কিছুদিন আগে, তৃণমূলের শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, শান্তনুকে দল থেকে নিলম্বিত করা হবে। তবে, কোন কার্যক্রমের কারণে তাঁকে নিলম্বিত করা হয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানানো হয়নি। এক্ষেত্রে, দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার কথা শোনা গেলেও, সেই বিষয়ে নিশ্চিত কিছুই প্রকাশিত হয়নি। শান্তনু সেন নিজে জানান, তিনি বুঝতে পারছেন না কোন দোষে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে, তিনি আরজি কর-কাণ্ডের প্রভাবে এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না।
তৃণমূলের কিছু সূত্রের মতে, শান্তনু সেন ডায়মন্ড হারবারে ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে জড়িত থাকার কারণে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। এই কর্মসূচি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে একটি ‘সমান্তরাল ব্যবস্থা’ তৈরি করার চেষ্টা বলে মনে করে প্রশাসনের বড় অংশ। যদিও এই বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তৃণমূলের কিছু নেতা মনে করেন, শান্তনু দলের চিকিৎসক নেতা হওয়া সত্ত্বেও দলের অনুমতি ছাড়া নিজের পদ ব্যবহার করে চিকিৎসকদের এক জায়গায় জড়ো করেছেন। তবে শান্তনু নিজে দাবি করেন, ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়া ‘অন্যায়’ নয়।
এভাবে দল থেকে নিলম্বিত হওয়ার পর, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সরকারি পদ থেকেও তিনি অপসারিত হলেন। এই ঘটনাটি তৃণমূলের মধ্যে নানা প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে দলের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং নেতা-নেত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে।