গত এক মাসে ভারতীয় মুদ্রার প্রায় ২% মূল্য কমে যাওয়ার কারণে ভারতের শেয়ার বাজারে (Indian Share Market) ব্যাপক পতন ঘটেছে। বর্তমানে ভারতের শেয়ার ((Indian Share Market) বাজারের মূল্যায়ন কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এক মাস আগে ছিল ৫.১৬ ট্রিলিয়ন ডলার। তথ্য অনুযায়ী এটা বিশ্বের শীর্ষ শেয়ার বাজারগুলির মধ্যে ডলার ভিত্তিক সর্বোচ্চ পতন, যা ৯% হ্রাস পেয়েছে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের মূল্যায়ন ১.৮% কমে ৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। চীনের শেয়ার বাজারেও ৬.২% হ্রাস হয়েছে। এই দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির সংমিশ্রণে বিশ্বের শেয়ার বাজারের প্রায় ৬০% অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একাই ৫১% এর বেশি অংশীদার।
এছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান এবং হংকংয়ের শেয়ার বাজারগুলিতেও পতন লক্ষ্য করা গেছে। যুক্তরাজ্যের শেয়ার বাজারের মূল্যায়ন ৪.১%, কানাডার ৩.২%, এবং জাপান ও হংকংয়ের ২.৩% করে কমেছে। তবে সৌদি আরবের শেয়ার বাজার ভালো পারফর্ম করেছে। যা বিশ্বের নবম বৃহত্তম শেয়ার বাজার হিসেবে পরিচিত। সৌদি আরবের ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যায়ন থাকা সত্ত্বেও, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের শেয়ার বাজার অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো ফলাফল করেছে। তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের সম্ভাবনা জোরালো হওয়ার ফলে।
নোমুরা ইন্ডিয়া ইকুইটি রিসার্চ বিভাগের প্রধান সায়ন মুখার্জি বলেছেন, “২০২৫ সালের শুরুতে পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক অবস্থা অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির মধ্যে প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার সম্পর্কে যথেষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি প্রিমিয়ামের কারণ হতে পারে, যা শেয়ারের মূল্যায়নকে প্রভাবিত করতে পারে।”
নোমুরার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষে নিফটি৫০ সূচক ২১,৮০০ থেকে ২৫,৭০০ পয়েন্টের মধ্যে থাকবে। ব্রোকেজটি ভারতীয় শেয়ার বাজারে আর্থিক খাত, ভোগ্যপণ্য, তেল ও গ্যাস, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেলিকম, পাওয়ার, ইন্টারনেট এবং রিয়েল এস্টেট খাতে সিলেকটিভ ক্রয়ের পরামর্শ দিয়েছে। তবে মূল্যায়নের দিক থেকে অতিরিক্ত দামের শেয়ারগুলি এড়াতে বলছে এবং ভোগ্যপণ্য, অটো, মূলধন সৃজন, সিমেন্ট, হাসপাতাল এবং ধাতু খাতে কম আগ্রহী।
ভারতের শেয়ার বাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের অব্যাহত বিক্রি এবং ডলারের সূচক শক্তিশালী হওয়ার কারণে ভারতীয় টাকা ৮৬ প্রতি ডলার অতিক্রম করেছে। এই অবমূল্যায়ন ভারতের জন্য বিশেষভাবে সমস্যাজনক, কারণ দেশটি একটি নেট তেল আমদানিকারক এবং তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বাজারে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। গত শুক্রবার বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও ৩৮৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছেন, যার ফলে মাসিক বিক্রির পরিমাণ পৌঁছেছে ৬.৭ বিলিয়ন ডলারে।
ফলে গত সপ্তাহে শুক্রবার নিফটি৫০ সূচক ২৩,২০৩.২০ পয়েন্টে শেষ হয়েছে এবং গত এক মাসে প্রায় ৫% পতন হয়েছে। ভারতের শেয়ার বাজারে এই পতন বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা এবং ভারতীয় অর্থনীতির উপর এর প্রভাব সামলাতে আরো সময় লাগবে।
এই অবস্থায় ভারতীয় শেয়ার বাজারে সিলেকটিভ বিনিয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যেখানে লাভজনক সেক্টরগুলোতে মনোনিবেশ করা এবং অবমূল্যায়িত শেয়ারগুলি কিনে রাখার সুযোগ নেওয়া যেতে পারে।