শেষ টেস্টে ব্যাট করতে নামার অনুভূতি কেমন ছিল? জানালেন সচিন

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নক্ষত্রদের মধ্যে একজন হলেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। তাঁর অসাধারণ ক্যারিয়ার, হাজার হাজার রান, অসংখ্য রেকর্ড এবং ক্রিকেটের প্রতি…

Sachin Tendulkar Opens Up About Emotions During His Last Test Match Batting

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নক্ষত্রদের মধ্যে একজন হলেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। তাঁর অসাধারণ ক্যারিয়ার, হাজার হাজার রান, অসংখ্য রেকর্ড এবং ক্রিকেটের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা কোটি কোটি ভারতবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে। তবে, ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসর গ্রহণের মুহূর্তটি ছিল এক বিশেষ ঘটনা। ২০১৩ সালে, নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচের আগে সচিন তেন্ডুলকর অনেক কিছু অনুভব করেছিলেন। জীবনের শেষ টেস্টে ব্যাট করতে নামার সময় তাঁর অনুভূতির কথা এবার প্রকাশ করলেন মাস্টার ব্লাস্টার নিজেই।

মায়ের উপস্থিতি এবং আবেগ
সচিনের জীবনে তাঁর মা, রামাইকো তেন্ডুলকর, একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেন। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অনেক মুহূর্তে মা তাঁকে পাশে ছিলেন না, কারণ সচিনকে অনেক সময় দেশের বাইরে খেলা ছিল। তাই, শেষ টেস্টে মাঠে মায়ের উপস্থিতি তাঁর জন্য এক অসাধারণ মুহূর্ত ছিল। সচিন বলেন, “জীবনের শেষ টেস্টটা মা মাঠে বসে দেখুক, এটা একান্তভাবে চেয়েছিলাম।” তিনি জানান, নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটি তিনি চাইছিলেন মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে হোক, কারণ মায়ের শারীরিক অবস্থা সে সময় এমন ছিল যে মুম্বাইয়ের বাইরে কোথাও যাওয়া তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।

   

সচিনের শেষ টেস্ট ম্যাচটি ছিল ২০১৩ সালের নভেম্বরে, ভারতের মাটিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সচিন আরও জানান, তিনি শ্রীনিবাসনকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এই অনুরোধ করেছিলেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি সেই অনুরোধ মেনে নেন। সচিনের মতে, এটি তাঁর জীবনের একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত ছিল, যেখানে তাঁর মা প্রথমবারের মতো তাঁর খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।

আবেগের স্রোতে ডুবে থাকা সচিন
সচিন তেন্ডুলকর নিজেই বলেছেন, “জীবনের শেষ টেস্টে ব্যাট করতে নামার সময় আমার চোখ ভরে আসছিল। সব কিছু ঝাপসা লাগছিল। কিন্তু মনে হচ্ছিল যে, আজ যাই হোক না কেন, ক্রিজে টিকে থাকতে হবে।” এই মুহূর্তটি ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। সচিন যখন ব্যাট করতে মাঠে নামছিলেন, তখন সব ক্যামেরার ফোকাস ছিল তাঁর মা-র দিকে, এবং একে একে তাঁকে বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছিল। সচিন জানান, “মনে হচ্ছিল ক্যামেরাপার্সনরা আমার আবেগ নিয়ে যেন খেলা করছিল। সন্দেহ হচ্ছিল, তারা কি সব ওয়েস্ট ইন্ডিজের লোক নয় তো?”

শেষ টেস্ট ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সচিনের জন্য আবেগে ভরা। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে মাঠে নেমে, তিনি নিজের অনুভূতিগুলিকে সংবেদনশীলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁকে ক্রিজে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল যে, সারা জীবন ধরে যে ক্রিকেট খেলা, তার প্রতিটি মুহূর্ত যেন তাঁর সামনে ফিরে আসছে।

ওয়াংখেড়ের ইতিহাস এবং সম্মান
ভারতের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সচিনের শেষ টেস্টের ম্যাচটি ভারত জিতেছিল ইনিংস ও ১২৬ রানে। এতে মহম্মদ শামির দুরন্ত বলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সচিনের জন্য এই ম্যাচটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়। শেষ পর্যন্ত, মাঠে এসে তিনি পিচে মাথা নত করেছিলেন, যা ক্রিকেটের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার প্রতীক।

সচিন বলেন, “শেষ টেস্টে ব্যাট করতে নামার সময় প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্লেয়াররা যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছে। মাঠ ভর্তি দর্শক ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে। সেই সচিন সচিন চিৎকার, সেই অনুভূতি, সেই ভালো লাগা, আজও সেই সবের অভাব অনুভব করি।”

ওয়াংখেড়ের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে, সচিনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল প্রতিটি কোণায়। ক্রিকেট বিশ্ব তাকে ‘ভারতের রত্ন’ এবং ‘ক্রিকেটের ভগবান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, আর সেই ম্যাচটি তার এক দীর্ঘ যাত্রার সমাপ্তি।

পিচে প্রণাম এবং অবসরের মুহূর্ত
ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে সচিন তেন্ডুলকর যখন শেষবারের মতো মাঠ ছেড়ে যাচ্ছিলেন, তিনি পিচে এসে প্রণাম করেছিলেন। এটি ছিল এক অমর মুহূর্ত, যেখানে তিনি তার ক্রিকেট জীবন এবং এই খেলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছিলেন।

এই মুহূর্তটি ছিল ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। সচিনের বিদায়ের সময় মাঠে উপস্থিত সবাই তাকে একসাথে সম্মান জানিয়েছিলেন। তার অবসর ক্রিকেট দুনিয়াকে একটি নতুন দিগন্তে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে তাঁর মতো কিংবদন্তি আর কেউ আসবে কিনা, তা সন্দেহজনক।

ক্রিকেটের মহারথীর মহাপ্রস্থান
সচিন তেন্ডুলকরের অবসর ক্রিকেটের ইতিহাসে এক মহান অধ্যায়। তাঁর ব্যাটিং, তার নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রম, তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর খেলার প্রতি অদম্য ভালোবাসা এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছে। ভারতীয় ক্রিকেটে থেমে গেছে এক মহারথীর মহাযাত্রা, তবে তাঁর রেখে যাওয়া শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব নয়। সচিনের ক্যারিয়ার আজও কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে অমলিন হয়ে রয়েছে।

সচিন তেন্ডুলকর শুধুমাত্র এক কিংবদন্তি ক্রিকেটার নন, তিনি এক দিকনির্দেশক, একজন অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন, তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার, তাঁর অবসর—এই সবই ভারতীয় ক্রিকেটের এক অমূল্য রত্ন হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।