Digha hotels: দিঘার হোটেলে খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের হানা, বাজেয়াপ্ত পচা খাবার

দিঘায় (Digha) পর্যটকদের জন্য খাবারের মান নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, বেশ কিছু হোটেল এবং রেস্তরাঁ অস্বাস্থ্যকর, বাসি ও পচা খাবার বিক্রি…

Food Safety Raid in Digha Hotels Seizes Expired and Spoiled Food"

দিঘায় (Digha) পর্যটকদের জন্য খাবারের মান নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, বেশ কিছু হোটেল এবং রেস্তরাঁ অস্বাস্থ্যকর, বাসি ও পচা খাবার বিক্রি করছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, গত মঙ্গলবার সকালে জেলা খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর অভিযান চালিয়ে নিউ দিঘার প্রায় ২০টি হোটেল ও রেস্তরাঁর ওপর তল্লাশি চালায়। এ সময় অসংখ্য অস্বাস্থ্যকর এবং পচা খাবার উদ্ধার করা হয়, যা পর্যটকদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা হোটেলগুলোর রান্নাঘরে এবং অন্যান্য সংরক্ষণস্থলে তল্লাশি চালিয়ে বাসি এবং পচা খাবারের বিশাল মজুদ উদ্ধার করেন। বিশেষ করে রান্না করা মাছের ঝোল, তড়কা, বিরিয়ানি, কাঁচা মাছ ও মাংসের মজুদ পাওয়া গেছে। এসব খাবার এতটাই অপরিচ্ছন্ন ছিল যে, সেগুলো পুনরায় গরম করে পর্যটকদের পরিবেশন করার পরিকল্পনা ছিল হোটেল মালিকদের।

   

খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, তল্লাশির সময় রান্না করা খাবারে বেআইনি রং এবং নোংরা জল ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব বিষয় জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা একদিকে যেমন আইনি দায়িত্ব, অন্যদিকে পর্যটকদের সুস্থতার জন্যও এটি অপরিহার্য।

খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের অভিযানে মোট ১৩টি হোটেল ও রেস্তরাঁর মালিককে আইনি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করার প্রতিশ্রুতি দেবেন। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর এমনকি হোটেল মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এ ধরনের অবহেলা অব্যাহত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, দিঘায় পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পর্যটকই জানিয়েছেন, তাঁরা জানতেন না যে এমন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু পর্যটক এমনকি খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ করেছেন। এক পর্যটক বলেন, “আমরা যখন এখানে এসেছি, তখন খাবারের মান নিয়ে কোন ধারণা ছিল না। হোটেলগুলোতে খাবারের দাম যথেষ্ট বেশি, কিন্তু খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ ছিল। আজকের অভিযানে যা ধরা পড়ল, তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।”

দিঘার পর্যটন শিল্পে খাবারের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আসা পর্যটকরা প্রত্যাশা করেন, তাঁদের সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে খাবার সরবরাহ করা হবে। তাই খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের এই পদক্ষেপকে ভালোভাবেই গ্রহণ করা হচ্ছে।

খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে আরও এমন অভিযান চালাবেন। এর মাধ্যমে তাঁরা প্রমাণ করতে চান যে, খাদ্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষা শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, সমস্ত জনগণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এমন অভিযান চলতে থাকলে, খাবারের মান বাড়ানো এবং অসুস্থতা প্রতিরোধে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।

অন্যদিকে, দিঘা এলাকার ব্যবসায়ীরা এই অভিযানে কিছুটা হতাশ হলেও, তাঁরা আশা করছেন, এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবেই কাজ করবে। দিঘায় ব্যবসা করার জন্য হোটেল এবং রেস্তরাঁ মালিকদের অবশ্যই খাদ্য সুরক্ষা মান মেনে চলতে হবে। এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যবসার মান উন্নত করতে পারবেন এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।

খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর কর্তৃক চালানো এই অভিযান কেবল দিঘার পর্যটন শিল্পের জন্যই নয়, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা, পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সুতরাং, খাবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে পর্যটকরা এখানে নিরাপদভাবে আসতে পারেন এবং ভ্রমণের আনন্দ নিতে পারেন।

উল্লেখযোগ্য যে, খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর ইতিমধ্যেই দিঘায় এই ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে এবং পরবর্তী সময়ে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকেও এমন অভিযান শুরু হতে পারে। এর মাধ্যমে সকল হোটেল এবং রেস্তরাঁ মালিকদের সতর্ক করা হবে এবং খাবারের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।