মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG) এই মরসুমে আইএসএলে (ISL) এক দারুণ শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের জয়যাত্রা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, তবে সম্প্রতি তাদের পারফরম্যান্সে কিছু অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। গত দুই ম্যাচে, বিশেষ করে কলকাতা ডার্বি (Kolkata Derby) এবং জামশেদপুর এফসি (Jamshedpur FC) ম্যাচের পর দলের বেশ কিছু ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে জওহরলাল নেহেরু ইন্ডোর স্টেডিয়ামে (Jawaharlal Nehru Indoor Stadium) চেন্নাইয়িন এফসির (Chennaiyin FC) বিপক্ষে খেলতে নামছে সবুজ-মেরুন শিবির।
স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনার পরিচালনায় বাগান শিবির ১৬ ম্যাচ খেলে মাত্র দুই ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। মোট ৩১টি গোল করেছে। এই পরিসংখ্যান দেখে, তাদের শক্তি বা দক্ষতা নিয়ে সন্দেহের কিছু নেই। তবে ফুটবল এমন এক খেলা, যেখানে অঘটন ঘটতে পারে যেকোনো সময়, আর আইএসএল তো এমন এক লিগ, যেখানে নিয়মিত অঘটন ঘটে।
বেঙ্গালুরু এফসি এবং এফসি গোয়ার কাছে তাদের হারের পর, এটা বলা যায় যে তারা এখনো নিজেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত বলে মনে করতে পারে না। এই রকম ঘটনার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বেঙ্গালুরু বনাম মহামেডান ম্যাচ। এই ম্যাচের শেষ কয়েক মিনিট বাকি থাকতে থাকতে কাশমিসভের গোলে তিন পয়েন্ট ঘরে তুলেছিল সাদা-কালো ব্রিগেড।
এবার, মোহনবাগান যে দলটির বিপক্ষে মাঠে নামবে, সেই চেন্নাইয়িন এফসি এক ধরনের অদ্ভুত দল। তাদের খেলার ধরন পূর্বানুমান করা খুবই কঠিন। কখন তারা দুর্দান্ত খেলে, আবার কখনো নিজেদের ভিতরে কিছু ভুলের কারণে হারে। গত চার ম্যাচে জয়হীন তারা, তবে এর আগে জামশেদপুর এফসি, নর্থইস্ট ইউনাইটেড, ওডিশা এফসি এবং পাঞ্জাব এফসির মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে তিন পয়েন্ট নিয়ে প্রমান করেছে তাদের ক্ষমতা। তাদের বিপক্ষে যে কোনো ফলই হতে পারে, এটা মোহনবাগানের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
তবে মোহনবাগান যদি চেন্নাইয়িন এফসির মতো দলগুলোর বিরুদ্ধে সাবধানী না হয়, তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে। শুক্রবার জামশেদপুরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে, মোহনবাগান নিজেদের শক্তি দেখালেও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোল ড্র করে ম্যাচ শেষ করে। প্রথমার্ধে তারা দাপট দেখিয়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি। তাছাড়া, তারা একাধিকবার গোলের সুযোগ তৈরি করলেও, একটির বেশি গোল করতে পারেনি। এটা তাদের একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
কলকাতা ডার্বিতেও একই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছিল। তারা প্রায় ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল, তবে একটিও গোল করতে পারেনি। এর আগে, মোহনবাগান গোল মিসের সমস্যায় ভুগছিল। তবে মাঝখানে সেটা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছিল বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে, তাদের গোলের সুযোগ নষ্ট করার প্রবণতা আবার ফিরে এসেছে। এই বিষয়টি যদি তারা সমাধান করতে না পারে, তবে তাদের ধারাবাহিক সাফল্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে।
তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে চিন্তার, সেটা হল শুভাশীষ-ম্যাকলারেনরা হয়ত নিজেদের শক্তি এবং সাফল্য নিয়ে একটু আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, তারা যদি মনে করে যে তারা সবকিছুতে অপ্রতিরোধ্য, তবে চেন্নাইয়িন এফসি তাদের চোখ খুলে দিতে পারে। চেন্নাই এমন এক দল, তারা যেকোনো মুহূর্তে বড় অঘটন ঘটাতে পারে। আর সেই পরিস্থিতিতে মোহনবাগান যদি সঠিক মনোভাব নিয়ে না খেলতে পারে, তবে তাদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
মোহনবাগানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল নিজেদের সুযোগগুলো কাজে লাগানো এবং মাঠে আক্রমণাত্মক খেলা বজায় রাখা। তারা যদি গোল মিসের প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে পারে এবং তাদের সঠিক গেম প্ল্যান অনুসরণ করতে পারে, তবে তাদের শিল্ড জয়ী হওয়ার স্বপ্ন ধরে রাখা সম্ভব। তবে, একে অপরকে সমর্থন এবং পরস্পরের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারে।