“প্রিয় বন্ধু”: ট্রাম্পের শপথ গ্রহণে বিশ্বের দেশগুলির প্রতিক্রিয়া

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সোমবার দ্বিতীয়বারের জন্য শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন। তাঁর দ্বিতীয় শপথ গ্রহণের পর বিভিন্ন দেশের নেতারা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে…

Donald Trump's Inauguration

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সোমবার দ্বিতীয়বারের জন্য শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন। তাঁর দ্বিতীয় শপথ গ্রহণের পর বিভিন্ন দেশের নেতারা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া।

এখানে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর প্রথম প্রতিক্রিয়া গুলি তুলে ধরা হল:
‘শুধু শান্তি’: ইউক্রেন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়, এবং তার ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ নীতিটি আমেরিকার নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার একটি সুযোগ তৈরি করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে, যা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার।”

   

জেলেনস্কির এই মন্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের নীতির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইউক্রেনের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছিল।

‘টার্বো-চার্জড’ ব্যয়: ন্যাটো
ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফিরে আসা ন্যাটোর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় এবং উৎপাদনকে ‘টার্বো-চার্জ’ করবে।” রুটে মন্তব্য করেছেন যে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে ন্যাটো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগ হবে।

এটি ইউরোপে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী শাসনের শর্ত অনুযায়ী ন্যাটোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে, যেখানে তিনি সর্বদা সদস্য দেশগুলির কাছ থেকে আরও বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছেন।

‘সেরা দিনগুলি আসছে’: ইসরায়েল
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, একসঙ্গে কাজ করলে আমরা মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। আমাদের সম্পর্কের সেরা দিনগুলি এখনো আসেনি।” নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যটি ইসরায়েল এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েল ট্রাম্পের শাসনামলে অনেক সুবিধা পেয়েছিল, বিশেষ করে ট্রাম্পের শাসনে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করা।

‘কাজ করার অপেক্ষায়’: ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উর্সুলা ভন ডের লেয়েন ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর শপথ গ্রহণের পর একটি টুইট করেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনার সাথে একসঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছে যাতে আমরা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে পারি। একসাথে, আমাদের সমাজগুলি আরও বড় মাপের সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে এবং আমাদের সাধারণ নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে পারে।”

ভন ডের লেয়েনের এই মন্তব্যটি দেখায় যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায় এবং ট্রাম্পের সাথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।

‘প্রিয় বন্ধু’: ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমি আবার একসঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছি, যাতে আমাদের উভয় দেশের লাভ হয় এবং আমরা বিশ্বের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যত তৈরি করতে পারি।” মোদী তাঁর দীর্ঘ সময়ের ‘প্রিয় বন্ধু’ ট্রাম্পের প্রতি এই প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছেন।

মোদী-ট্রাম্প সম্পর্ক গত কয়েক বছরে অত্যন্ত গভীর হয়েছে এবং ভারতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের প্রতি এই ধরনের এক বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা ভারতের বিদেশনীতি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্বকে প্রমাণ করে।

‘শক্তিশালী সম্পর্ক’: কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমরা যখন একসঙ্গে কাজ করি, আমরা শক্তিশালী, এবং আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।” তবে ট্রুডো সতর্কতার সাথে বলেছিলেন, “কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব রয়েছে।”

এখানে, ট্রুডো কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গুরুত্ব এবং পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যদিও ট্রাম্পের সময়কালকালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক সময় উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, তবে ট্রুডো এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।

‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র’: জার্মানি
জার্মানির চ্যান্সেলর অলাফ শলৎজ ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং আমাদের নীতির লক্ষ্য সর্বদা একটি ভাল ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখা।”

শলৎজের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের উন্নতি করতে চায় এবং একটি শক্তিশালী ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের জন্য তারা কাজ করবে।

বিশ্বের চোখে ট্রাম্পের নতুন শপথ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের শপথ গ্রহণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের থেকে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে, তা বোঝায় যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু দেশ যেমন ইউক্রেন, ইসরায়েল এবং ভারত ট্রাম্পের নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, আবার কিছু দেশ যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা তার সাথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। তবে, ট্রাম্পের স্বভাবগত অনিশ্চয়তার কারণে তাঁর ভবিষ্যত নীতি কীভাবে বিশ্বকে প্রভাবিত করবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

এখন, ট্রাম্পের নেতৃত্বের অধীনে বিশ্ব রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে, এবং তা কেবল আমেরিকান মাটি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সারা বিশ্বের উপর তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে।