কংগ্রেসের নতুন সদর দফতরে বাংলা ও বাঙালির বঞ্চনা

দিল্লির লুটেন্স জোনের ৯এ কোটলা রোডে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নতুন সদর দফতরের (Congress Headquarters) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেল। তবে উদ্বোধনের দিন থেকেই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বাঙালির…

Congress' New Headquarters

দিল্লির লুটেন্স জোনের ৯এ কোটলা রোডে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নতুন সদর দফতরের (Congress Headquarters) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেল। তবে উদ্বোধনের দিন থেকেই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বাঙালির উপস্থিতি এবং বাংলার সম্মান। অভিযোগ, কংগ্রেসের নতুন ভবনে বাংলার অবদান এবং বাঙালি নেতাদের যথার্থ মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

নেতাদের স্মৃতিফলক থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি
নতুন ভবনের দেওয়াল চিত্রে কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতার ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। সেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও এবং গুলাম নবি আজাদের মতো নেতাদের ছবি থাকলেও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কোনো উল্লেখ নেই। দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তা সত্ত্বেও তাঁর ছবি বা আলাদা স্মৃতিচিহ্ন না থাকা বাংলার প্রতি কংগ্রেসের মনোভাবের দিকে আঙুল তুলেছে।

   

ভাষার প্রশ্নে বাংলা উপেক্ষিত
আরেকটি বিতর্কিত ইস্যু উঠে এসেছে ভবনের মূল প্রবেশদ্বারের স্ক্রিনে। কংগ্রেসের নাম সেখানে সমস্ত সরকারি ভাষায় প্রদর্শিত হলেও বাংলায় তা অনুপস্থিত ছিল। বিষয়টি প্রথম নজরে আসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের। তিনি তৎক্ষণাৎ একটি চিঠি লিখে এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্ক্রিনে বাংলার সংযোজন ঘটানো হয়। তবে প্রথমেই বাংলাকে বাদ দেওয়া কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

কংগ্রেস সদর দফতর স্থানান্তর: ইতিহাসের মোড়
৪৬ বছর পর কংগ্রেস তাদের পুরনো ঠিকানা ২৪ আকবর রোড থেকে সরিয়ে আনছে নতুন ভবনে। ১৯৭৮ সালে ২৪ আকবর রোডের সরকারি বাংলোকে পার্টি সদর দফতর হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছিল কংগ্রেস। এবার কোটলা রোডে নির্মিত আধুনিক ছ’তলা ভবন ‘ইন্দিরা গান্ধী ভবন’ হয়ে উঠবে দলের নতুন কেন্দ্র।

২০০৯ সালে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নতুন ভবনের শিলান্যাস হয়েছিল। কিন্তু ভবনের নামকরণে তাঁকে সম্মান জানানো হয়নি। মনমোহন সিংয়ের নামে ভবনটির নামকরণের দাবি ওঠে দলের অন্দর থেকেই। তবে শেষ পর্যন্ত ভবনটির নাম রাখা হয় ‘ইন্দিরা গান্ধী ভবন’।

পরিবারতন্ত্রের অভিযোগে বিজেপির কটাক্ষ
নতুন ভবনের নামকরণ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। তাদের মতে, ‘ইন্দিরা গান্ধী ভবন’ নামকরণের মাধ্যমে কংগ্রেস আবারও পরিবারতন্ত্রের পরিচয় দিয়েছে। মনমোহন সিং বা অন্য কোনো নিরপেক্ষ নেতার নামে ভবনটির নামকরণ হলে তা আরও গ্রহণযোগ্য হতো বলে বিজেপি দাবি করেছে।

বাংলা ও বাঙালির বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস
বাঙালি নেতাদের অবদানের প্রতি কংগ্রেসের উদাসীনতা নতুন নয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রণব মুখোপাধ্যায় জীবনের বেশিরভাগ সময় কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছেন। অথচ তাঁকে দলপ্রধান করা হয়নি। বাংলার কংগ্রেস নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজনীতিতে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগও উঠে আসছে। নতুন সদর দফতরেও সেই ধারাবাহিকতারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন সমালোচকরা।

নতুন সদর দফতরে কংগ্রেসের যাত্রা শুরু হলেও বাঙালির বঞ্চনার এই অভিযোগ রাজনীতির ময়দানে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা এই অবহেলার প্রতিবাদে আরও সোচ্চার হবেন কি না, তা সময়ই বলবে। তবে কংগ্রেস যদি বাংলার রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করতে চায়, তবে এই বঞ্চনা মেটানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।