ইস্টবেঙ্গল (East Bengal FC) দলের গোল করা, জয়ের লক্ষ্য এবং শিরোপা জয় নিয়ে চিরকালই এক বিশাল স্বপ্ন রয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক (ISL) মরসুমে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যকে সামনে রেখে দলের প্রতিটি সদস্য কঠোর পরিশ্রম করছে। তবে এবারের মরসুমের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এরই মধ্যে গোয়ার (FC Goa) বিরুদ্ধে মরসুমের ১৬ নম্বর ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবে মশাল ব্রিগেড। তবে এই ম্যাচেই লাল-হলুদ জার্সিতে শিবিরের নতুন ফুটবলার রিচার্ড সেলিস (Richard Celis) মাঠে নামবেন? সেই প্রশ্ন ঘোরা ফেরা করছে মশাল সমর্থকদের মধ্যে।
ইন্ডিয়ান সুপার লীগের চলতি মরসুমে অনুশীলন থেকে ম্যাচে চোট পেয়ে কয়েক সপ্তাহের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ছেন বেশ কিছু ফুটবলার। সেই তালিকায় ছিল সাউল ক্রেসপো, ক্লেন্টন সিলভা, দিমিত্রিয়স, নিশু কুমার, হীরা মণ্ডল, হেক্টর ইউস্তে সহ একাধিক ফুটবলার। এমনকি চোট পেয়ে এই মরসুম থেকে ছিটকে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের গুরুত্বপূর্ন ফুটবলার। বর্তমানে চোট পেয়ে দলের চিন্তা বাড়িয়েছেন রক্ষণের তারকা ফুটবলার আনোয়ার আলি।
শুক্রবার গোয়া পৌঁছেই শুরু হয়ে যায় দলের অনুশীলন। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হয় তাদের অনুশীলন। কোচ অস্কার প্রজো দলের ফুটবলারদের সঙ্গে জোরকদমে কাজ করছেন। যদিও প্রথম ছয়ের মধ্যে পৌঁছানো কঠিন, তবুও কোচ এবং খেলোয়াড়রা একযোগে সেই লক্ষ্য পূরণের আশায় আছেন।
তবে, দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের চোট সমস্যা এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আশা প্রকাশ করেছিলেন হেক্টর ইউস্তে।তবে তার চোটের বিষয়টি এখনও অনেকটা অব্যাহত থাকায় তিনি এখনো পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠতে পারেননি। এতে দলের বিপক্ষে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে চোটে ভুগছেন মহম্মদ রাকিপ, প্রভাত লাকড়া, সাউল ক্রেসপো এবং অন্য অনেক ফুটবলারও।
বিশেষভাবে রাইট ব্যাক পজিশনে সমস্যা আরও বাড়ছে। কোচ অস্কার বাধ্য হয়েই গোয়ার বিপক্ষে রাইট ব্যাক পজিশনে নন্দকুমারকে খেলাতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে, লাল-হলুদ সমর্থকরা অত্যন্ত উত্তেজিত ও উদ্বিগ্ন রয়েছেন। দলের মূল অস্ত্র হিসেবে পরিচিত ক্লেন্টন সিলভা তার পুরানো পিঠের ব্যথায় ভুগছেন এবং গোয়ায় গেলেও তিনি মাঠে নামতে পারছেন না। সাইডলাইনে রিহ্যাব করছেন, যার ফলে গোয়ার বিপক্ষে তার খেলা এক প্রকার অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে আক্রমণভাগে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ের অভাব দেখা দিতে পারে।
দলে থাকা নতুন বিদেশি রিচার্ড সেলিসের উপর এখন অনেকটা চোখ থাকছে। তিনি দলের জন্য কীভাবে ভূমিকা রাখেন, তা নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই। সেলিসের সাথে দলের সমন্বয় এবং তার দক্ষতা প্রমাণ করা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফিটনেসের ব্যাপারে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও, কোচ অস্কার আশা করছেন যে সেলিস তার সেরাটা দিয়ে দলের জন্য গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
তবে, যে সমস্যাগুলো এখন ইস্টবেঙ্গল দলকে ভোগাচ্ছে, তা শুধুমাত্র শারীরিক পরিস্থিতি নয়। দলটি গত মরসুমে যতটা সফল ছিল, ততটা এই মরসুমে সেই একই ধারায় এগিয়ে যেতে পারছে না। চোটের সমস্যাগুলো যেন চলতেই থাকে এবং দলের খেলোয়াড়রা মাঠে ফিরলেও তারা কতটা পারফর্ম করতে পারবে, তা নিয়ে একধরণের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এর পাশাপাশি, দলের ম্যানেজমেন্ট ও কোচিং স্টাফদের কাজ কঠিন হয়ে উঠেছে। দলের ফুটবলারদের মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রস্তুত রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে, শিরোপার স্বপ্ন এখনও শেষ হয়নি। ইস্টবেঙ্গল তাদের খেলার ধারাকে ঠিক রেখে এই সময়ের কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারে। কৌশলগতভাবে কোচ অস্কার ব্রুজো ইতিবাচক মনোভাব এবং শক্তিশালী রক্ষণভাগের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর কোচিং স্টাফরা মাঠে প্রতিটি মুহূর্তে শীর্ষ পর্যায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে যাতে খেলোয়াড়রা চূড়ান্ত ম্যাচে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারে। তবে, সবার আগে প্রয়োজন ফিটনেস এবং সঠিক কৌশল, যা পরবর্তী ম্যাচগুলিতে প্রমাণিত হতে পারে।
এই মুহূর্তে দলের মধ্যে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে, তবে একে অতিক্রম করতে দলের প্রয়োজন একতা এবং মনোবল। খেলোয়াড়দের এই সংকটময় মুহূর্তে সঠিক মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে, ইস্টবেঙ্গলের সামনে আরেকটি কঠিন মিশন—গোয়ার বিপক্ষে জয়লাভ করা এবং একে কাজে পরিণত করা।