পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ১৪ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলো স্থানীয় আদালত। এই রায়টি অল-কাদির(Al-Qadir) ট্রাস্টের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জমি দুর্নীতি মামলা(corruption case) সংক্রান্ত। ইমরান খান এবং তার স্ত্রী (জৈনাত ইমরান) এর বিরুদ্ধে জমি দুর্নীতি মামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি খানের বিরুদ্ধে আনা সবচেয়ে বড় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে একটি। গত শুক্রবার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আডিলা জেলে একটি বিশেষ অ্যান্টি-করাপশন কোর্টে এই রায় ঘোষণা করা হয়। এখানেই ইমরান খান আগস্ট ২০২৩ থেকে বন্দী রয়েছেন।
বিচারক নাসির জাভেদ রানা রায়টি ঘোষণা করেন। আগে তিনবার এই রায় স্থগিত করা হয়েছিল। রায় ঘোষণার আগে বিচারক একে একে মামলার যাবতীয় দিক পর্যালোচনা করেন। আদালতের বাইরে অনেকেই এই মামলার নিষ্পত্তি দেখতে উপস্থিত ছিলেন। এই মামলার কেন্দ্রে রয়েছে ৫০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি। এটি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি পাকিস্তানকে ফিরিয়ে দেয়। এটি ছিল একটি সমঝোতা চুক্তির অংশ,যেখানে একটি বড় প্রপার্টি টাইকুনের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়।
অভিযোগ করা হয়, এই ৫০ বিলিয়ন রুপি পাকিস্তানের জাতীয় কোষাগারে না গিয়ে তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ইমরান খান এবং তার স্ত্রী মিলিতভাবে এই টাকা নিজেদের খাতে ব্যবহার করেছেনে। অভিযোগ, একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে তারা এই টাকা ব্যাবহার করে। তারা ওই টাকায় থেকে লাভবান হয়ে ঝেলুমে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৪৫৮ কানাল জমি কিনেছেন। এই জমি কেনার মাধ্যমে অল-কাদির ট্রাস্ট এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আর্থিক সুবিধা লাভ করেছেন,যা পাকিস্তানের জাতীয় তহবিলের ক্ষতির কারণ হয়েছে।
ডিসেম্বর ২০২৩ সালে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো(এনএবি) ইমরান খান,তার স্ত্রী এবং ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলায় তারা ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড (৫০ বিলিয়ন রুপি) ক্ষতি করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তবে, বেশিরভাগ অন্য অভিযুক্তরা পাকিস্তানের বাইরে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো গ্রেপ্তার হয়নি। এই মামলার পটভূমিতে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং আর্থিক জটিলতা। এই ঘটনা পাকিস্তানে সরকারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের জন্ম দিয়েছে।
ইমরান খান এবং তার স্ত্রী উভয়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের প্রতিফলন প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা দাবি করছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা(corruption case) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সরকারের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইমরান খান এবং তার সমর্থকরা এই রায়কে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন, যা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তাকে কমিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।
এদিকে, এই রায়টি পাকিস্তানে একটি নতুন রাজনৈতিক ও আইনি আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আইনের শাসন এবং দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তানে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠবে।