ডার্বি জয়ের পর আজ মোহনবাগানের (Mohun Bagan) প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ। জে আর ডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ জামশেদপুর এফ সি (Jamshedpur FC)। তবে শুরুতেই চিন্তার ভাঁজ দেখা গিয়েছে সবুজ মেরুন শিবিরে। চোটের কারণে থাকতে পারছেন না সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা। শুধু এই ম্যাচই নয়, আগামী দুই-তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরেই থাকবেন থাপাকে। বর্তমানে লিগ টেবিলের শীর্ষে রয়েছে মোহনবাগান।
তার থেকে ঠিক আট পয়েন্ট ব্যবধানে রয়েছে জামশেদপুর। এই ব্যবধান কি বাড়িয়ে নিতে পারবেন হোসে মোলিনা, নাকি শেষ হাসি হাসবেন খালেদ জামিল? চোখ থাকবে সেই দিকেই। আপাতত গত ম্যাচে জামশেদপুর মুম্বই সিটি এফসিকে তার ঘরের মাঠে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে। রয়েছে লিগ টেবিলের চতুর্থ স্থানে। গত তিন ম্যাচে টানা জয় পেয়েছে খালিদ জামিলের দল।
প্রতিপক্ষ বিষয়ে মোহনবাগান(Mohun Bagan) কোচ মোলিনা বলেন, “ওরা অনেক গোল খেতে পারে ঠিকই। কিন্তু লিগ টেবলের উপরের দিকেই রয়েছে। তাহলে কীভাবে ওদের খারাপ দল বলা যায়? নর্থ-ইস্ট আর চেন্নাইয়িন ম্যাচে পাঁচ গোল করে খেয়েছে। কিন্তু বাকি ম্যাচে খুব বেশি গোল খায়নি ওরা।
থাপার চোটের পাশাপাশি আশিক কুরুনিয়ানও পুরোপুরি সুস্থ নন। ফলে তিনি জামশেদপুর ম্যাচে খেলতে পারবেন না এবিষয়ে তাদের কোচ আগেই জানিয়েছেন । তিনি বলেন, , “দিমি ও গ্রেগ শুরু থেকে খেলার জন্য প্রস্তুত। থাপা সম্ভবত দু-তিন সপ্তাহ খেলতে পারবেন না। আপুইয়া অনুশীলনে যোগ দিয়েছে এবং স্বাভাবিক ছন্দে রয়েছে, সে খেলার জন্য প্রস্তুত।”। গ্রেগ স্টুয়ার্ট এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসের দ্রুত সুস্থ হওয়া এবং জামশেদপুর ম্যাচে খেলা সম্পর্কে মোলিনা জানিয়েছেন, “তারা ধীরে ধীরে চোট কাটিয়ে উঠছে। গত ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে খেলেছে। এই ম্যাচেও খেলতে প্রস্তুত। দেখলো।”
শুক্রবার মোলিনার দলে বড় কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে বিকল্প খেলোয়াড় এবং চোট পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানান দুটি বিদেশী সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ এবং টম অলড্রেডের সঙ্গে দুই প্রান্তে শুভাশিস বোস এবং আশিস রাই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝমাঠে সাহাল আব্দুল সামাদ এবং গ্রেগ স্টুয়ার্ট শুরু করতে পারেন। দুই উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং। আক্রমণে কামিংস, ম্যাকলারেন এবং পেত্রাতোসদের মধ্যে দু’জন থাকার সম্ভাবনা। মোলিনা সম্ভবত এমন একটি লাইন-আপ ভাবতে পারেন।
আপুইয়ার ফিরে আসাটা দলের জন্য একটি ভালো খবর। যদিও থাপা না খেলতে পারলেও আপুইয়া তার অভাব পূরণ করতে সক্ষম হবেন কিনা নজর থাকবে সেই দিকে। তিনি শুরু থেকে খেললে, সহালকে রিজার্ভ বেঞ্চে থাকতে হতে পারে। তবে চোট সমস্যা এখানেঅ । আপুইয়া হাতের আঙুলে চোট পেয়েছেন। তবে আঙুলে ব্যান্ডেজ থাকা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার সকালে পুরো সময়ই দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। তবে ডার্বি জয়ের পর দল যাতে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে না ওঠে সেদিকেও নজর রেখেছেন মোহনবাগান কোচ।
তবে অন্যদিকে জামশেদপুর এফসির ঘরের মাঠের রেকর্ড বেশ প্রশংসনীয়। জেআরডি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আটটি ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই তারা জয় পেয়েছে। মুম্বই সিটি, ইস্টবেঙ্গল, হায়দরাবাদ, মহমেডান, পাঞ্জাব এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স এবং বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়েছে তারা। পৃথকফল একমাত্র চেন্নাইন এফসি।তাদের কাছে ১-৫ গোলে হেরেছে টাটার দল। তাই জামশেদপুরের ঘরের মাঠে মোহনবাগানের জন্য তিন পয়েন্ট পাওয়া সহজ হবে না।
এ কথা মেনে নিয়েছেন সবুজ-মেরুন কোচ বলেছেন, “জামশেদপুর তাদের ঘরের মাঠে দুর্দান্ত খেলছে। তারা মাত্র একটি হোম ম্যাচে হারিয়েছে। তাই আমাদের সেরা ফুটবল খেলতে হবে। কঠিন ম্যাচ হতে চলেছে, তবে আমরা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।”
প্রথম পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জয় পাওয়ার পর জামশেদপুর টানা তিন ম্যাচে ১৩ গোল খেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ইস্টবেঙ্গলের কাছে এক গোলে হেরেছিল তারা। তবে তার পর গত তিন ম্যাচে টানা জয় তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই শুক্রবার দুই আত্মবিশ্বাসী দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার জন্য গ্যালারিতে সমর্থকরা ভিড় জমাবেন। তবে জামশেদপুরের দুর্বল রক্ষণ তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। তারা সেরা ছয়ে থাকা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (২৩) গোল খেয়েছে এবং গোল খাওয়ার তালিকায় তারা চতুর্থ। তাদের গোল পার্থক্যও -১।
তবে মোলিনা এই নিয়ে চিন্তিত নন। তিনি বলেছেন, “জামশেদপুর কত গোল খেয়েছে, সেটা বড় কথা নয়। ওরা জিতছে, এটাই আসল। আসলে তারা দুটো ম্যাচে দশটি গোল খেয়েছে, সেই জন্যই সংখ্যাটা বেড়েছে। অন্য ম্যাচগুলোতে অত গোল খায়নি, তাই এটা নিয়ে বেশি ভাবার কিছু নেই।”
গোল করার দিক দিয়ে জামশেদপুর ধারাবাহিক। পাঁচ গোল করে তাদের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড মারে। চারটি করে গোল করেছেন হাভিয়ে সিভেরিও এবং হাভিয়ে হার্নান্দেজ। জাপানি ফরোয়ার্ড রেই তাচিকাওয়া দু’টি গোল করেছেন। তরুণ উইঙ্গার মহম্মদ সনন গোল না করলেও আক্রমণ তৈরি এবং গোলের পাস বাড়ানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এর আগে আই এস এলে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ৯ বার। পাঁচটিতে জিতেছে কলকাতার দল, তিনটিতে জামশেদপুর এফসি। একটি ড্র । ২০২২-২৩ মরশুমে সবুজ-মেরুন বাহিনী প্রথম ম্যাচে টাটাকে ১-০-য় হারায়। ফিরতি লিগের ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। ২০২১-২২ মরশুমে জামশেদপুর দুই ম্যাচেই জেতে, প্রথমে ২-১-এ ও পরে ১-০-য়। তার আগের মরশুমে দুই দলই একবার করে জিতেছে। প্রথমে জামশেদপুর এফসি ২-১-এ ও পরে মোহনবাগান ১-০-য়। গত মরশুমেও দু’বারই জেতে কলকাতার দল। প্রথমে ৩-২-এ, পরে ৩-০-য়। চলতি মরশুমে প্রথম দেখায় ঘরের মাঠে ৩-০-য় জেতে মোহনবাগান। দুই দলের মধ্যে ম্যাচে মোহনবাগান ১৩টি ও জামশেদপুর সাতটি গোল হজম করেছে।
মোহনবাগান (Mohun Bagan) সুপার জায়ান্ট সম্ভাব্য একাদশ : বিশাল কাইথ, আশিস রাই, শুভাশিস বোস, টম অলড্রেড, আলবার্তো রদ্রিগেজ, সাহল সামাদ, লালেংমাওইয়া রাল্টে, লিস্টন কোলাকো, মনভীর সিং, জেসন কামিংস এবং জেমি ম্যাক্লারেন।
জামশেদপুর এফসি সম্ভাব্য একাদশ : অ্যালবিনো গোমস, মুহাম্মদ উভাইস, স্টিফেন ইজে, প্রতীক চৌধুরী, নিখিল বারলা, লাজার সিরকোভিচ, সৌরভ দাস, জাভি হার্নান্দেজ, মোহাম্মদ সানান, জাভি হার্নান্দেজ এবং ইমরান খান।