ভারত-অস্ট্রেলিয়া বর্ডার গাভাস্কার ট্রফি ২০২৫-এর প্রথম সপ্তাহে শেষ হওয়ার পর থেকে ভারতের ক্রিকেট দুনিয়া একের পর এক বিতর্কে ঘিরে রয়েছে। সম্প্রতি, ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ গৌতম গম্ভীরের একটি মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। গম্ভীর দাবি করেছেন, যে খেলোয়াড়টি ভারতের ড্রেসিং রুমের গোপন খবর মিডিয়ায় ফাঁস করেছে, সে হলেন সারফরাজ খান। এই মন্তব্যের পর, ভারতের প্রাক্তন স্পিন কিং হারভজন সিং গম্ভীরকে এক কঠিন বার্তা দিয়েছেন। তিনি গম্ভীরকে বলছেন, যদি গম্ভীর জানতেন যে সারফরাজ খান এমন কিছু করেছেন, তবে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েই সরাসরি বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়, যখন একটি ভিডিও রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, গৌতম গম্ভীর এক বিবৃতিতে বলেন, “সারফরাজ খান ড্রেসিং রুমের কথা ফাঁস করেছে এবং সে বিষয়টি মিডিয়ায় জানিয়েছে।” তবে হারভজন সিং এই ধরনের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “যতই জয় হোক বা হার হোক, ড্রেসিং রুমের গোপন কথাগুলো মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া উচিত নয়।”
গম্ভীরের মন্তব্যে হারভজনের প্রতিক্রিয়া
হারভজন সিং গম্ভীরের বক্তব্য নিয়ে তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আপলোড করেন, যেখানে তিনি বলেন, “যতটুকু খবর এসেছে, সেটা অনুযায়ী গম্ভীর যদি এই অভিযোগ করে থাকে যে সারফরাজ খান ড্রেসিং রুমের কথা ফাঁস করেছে, তাহলে সে কাজটি ঠিক করেনি। যদি এটি সত্যি হয়, তবে গম্ভীর তাকে কেন তখনই সতর্ক করলেন না? তিনি কোচ, তাঁকে সেই সময়েই সারফরাজকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। এটা একজন কোচের দায়িত্ব, বিশেষ করে যখন খেলোয়াড় তরুণ।”
হারভজন সিং আরও বলেন, “আমরা যখন সিনিয়র খেলোয়াড় ছিলাম, তখন আমাদের দায়িত্ব ছিল তরুণদের সঠিক পথ দেখানো। গম্ভীর যদি সত্যিই এই অভিযোগটি করে থাকেন, তবে সেটা অত্যন্ত ভুল। ড্রেসিং রুমের গোপন বিষয়গুলো কখনই বাইরে আসা উচিত নয়।”
গম্ভীরের নতুন দায়িত্ব এবং দল পরিচালনা
গৌতম গম্ভীর, ভারতের নতুন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন। হারভজন সিং তার বক্তব্যে বলেন, “গম্ভীর একজন নতুন কোচ, তাকে সময় দেওয়া উচিত। খেলোয়াড়দেরও নতুন সিস্টেমে অভ্যস্ত হতে কিছু সময় প্রয়োজন।” হারভজন জানিয়ে দেন, যে খেলোয়াড়টি এমন কিছু করবে, তাকে সরাসরি ড্রেসিং রুমেই চুপিচুপি বোঝানোর কাজ কোচের। মিডিয়ায় গিয়ে খোলামেলা সমালোচনা করার বিষয়টি কখনই উচিত নয়।
তবে হারভজন সিংয়ের মতে, ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এটি একটি সময়ের প্রয়োজনীয় পর্যায়, যেখানে কোচ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। হারভজন বলেন, “দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, যেমন ২০০৫-০৬ মৌসুমে গ্রেগ চ্যাপেলের সময়, যেখানে এই ধরনের বিষয়গুলি আগেও ঘটেছিল। তবে, সেই সময় থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।”
ড্রেসিং রুমের গোপন খবর মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া কেন ক্ষতিকর?
হারভজন সিং খুবই ক্ষুব্ধ যে, বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলছেন, “কারা এগুলো করছে এবং কেন? এইসব খবর বাইরে আসা উচিত নয়। আপনাদের পরিবারকে বাইরে গিয়ে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না। যদি আপনার পরিবারের কথা খারাপভাবে বলা হয়, তাহলে সেটা আপনার নিজের পরিবারের নাম নষ্ট করে দেয়।” তিনি আরো যোগ করেন, “ড্রেসিং রুমে যে কথাবার্তা হয়, সেটা সেখানেই থাকা উচিত, যাতে দলকে সম্মান রক্ষা করা যায়।”
হারভজনের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ভারতের ক্রিকেট দল যেন কোনোভাবেই নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরে কথা না বলে, তা যেন কেবল মাঠে তাদের মনোযোগ থাকে। মাঠের বাইরে যেসব আলোচনা চলছে, তাতে দলের একতা এবং মানসিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সারফরাজ খান এবং তার ভবিষ্যৎ
সারফরাজ খান ২০২২-২৩ মরসুমে গোয়া ভিত্তিক চার্চিল ব্রাদার্স থেকে কেরালা ব্লাস্টার্সে যোগ দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে, তাকে লোনে পাঞ্জাব এফসিতে পাঠানো হয়, যেখানে সে কিছু ম্যাচ খেলেছিল। সেই সময়ের পর থেকেই সারফরাজের বিষয়ে বেশ কিছু গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। যদিও গত ডুরান্ড কাপের পর কেরালা ব্লাস্টার্সে তার সুযোগ সীমিত হয়ে গিয়েছিল, তারপরও তার সম্পর্কে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে।
এখন, এই সব বিতর্কের মধ্যে তার পক্ষে ভালো কিছু করা কঠিন হতে পারে। তবে হারভজন সিং এর কথা অনুসারে, যদি সত্যিই তিনি এমন কিছু করে থাকেন, তবে এটি তাঁর জন্য একটি বড় শিক্ষা হতে পারে।
ভারতীয় ক্রিকেটে এসব বিতর্ক এবং গুঞ্জন নিঃসন্দেহে দলের জন্য ক্ষতিকর। কোচ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। দলটির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোকে বাইরে নিয়ে আসা উচিত নয়, এবং হারভজন সিংয়ের কথায়, “ড্রেসিং রুমের কথা ড্রেসিং রুমেই থাকা উচিত।” তাই, ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে, যাতে দলটি মাঠে আরও শক্তিশালী এবং একতাবদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।