হটাৎ কেন আলোচনার শিরোনামে ডার্বি জয়ের প্রধান কারিগর

ব্রহ্মপুত্রের তটে গুয়াহাটি স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে জয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan SG)। বিশেষ করে এই জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা…

Mohun Bagan SG League Leaders

ব্রহ্মপুত্রের তটে গুয়াহাটি স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে জয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan SG)। বিশেষ করে এই জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আশীষ রাই (Asish Rai)। তা কোনোভাবেই অবমূল্যাঙ্কিত হওয়ার নয়। ২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার, যিনি এবারের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) মরসুমে তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন। সেই ম্যাচে দলের পক্ষে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। আশীষের সেই চমৎকার অ্যাসিস্ট যা জেমি ম্যাকলারের জয়ী গোলের সঙ্গে যুক্ত, তা ছিল এক দারুণ ডিফেন্স-স্প্লিটিং পাস, যা ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগকে পুরোপুরি বিভ্রান্ত করে দেয়।

এই পারফরম্যান্স, আশীষের জন্য একেবারে নতুন কিছু নয়। চলতি আইএসএল মরসুমে তার পারফরম্যান্স তার আগের কয়েকটি মরসুমে তুলনায় অনেক ভালো। আগের মরসুমে, আশীষ নিয়মিত প্রথম একাদশে জায়গা পেতে সংগ্রাম করছিলেন। তবে, এবার হোসে মোলিনার অধীনে তার ম্যাচ খেলার সুযোগ অনেক বেড়েছে এবং তার অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোচের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

   

আশীষের উন্নতির একটি বড় কারণ তার খেলোয়াড়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তন। আগের মরসুম গুলোতে তিনি অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়তেন এবং কখন কখন অপ্রয়োজনীয় ফাউল করতেন। কিন্তু এই মরসুমে হোসে মোলিনা তাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকতে শিখিয়েছেন। তিনি আশীষকে বুঝিয়েছেন কখন চ্যালেঞ্জে যাওয়াটা প্রয়োজন এবং কখন নিজেকে সেভাবেই রাখতে হবে যাতে শাস্তির আশঙ্কা না থাকে।

আশীষ এই মরসুমে ১৪টি ম্যাচ খেলে তিনটি হলুদ কার্ড পেয়েছেন, যা তার আগের তুলনায় অনেক কম। এর ফলে তিনি এখন আরও শান্তভাবে খেলে যাচ্ছেন এবং তার উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। ফলে তার খেলা থেকে যে অতিরিক্ত চাপ কমেছে, তা তাকে অনেক বেশি প্রভাবশালী করে তুলেছে। প্রতিপক্ষের ফুটবলার তাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করলেও, আশীষ এখন আর সেই ফাঁদে পড়েন না।

আক্রমণাত্মক ভূমিকায় পরিবর্তন

মোলিনা আশীষকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ভূমিকায় না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে আশীষকে খুব বেশি ওভারল্যাপিংয়ে জড়িত হতে হয় না এবং তার মূল কাজ থাকে ডিফেনসিভ কাজগুলোতে মনোযোগ দেওয়া। তবে, সে সব কিছুতেই আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় হিসেবে সহায়তা করেছে এবং তার তিনটি অ্যাসিস্ট ইতিমধ্যে তার আক্রমণাত্মক ভূমিকার প্রমাণ। তবে, এই মরসুমে আশীষের বড় পরিবর্তন হলো সে বুঝতে পেরেছে কখন আক্রমণে যেতে হবে এবং কখন সঠিক সময় ধরে রক্ষণভাগে থাকতে হবে।

এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও কার্যকরী করে তুলেছে। তিনি এখন নিজের শক্তি সঞ্চয় করতে পারছেন এবং তার খেলা শেষ পর্যন্ত যথাসম্ভব শক্তিশালীভাবে শেষ করতে পারছেন।

রক্ষণের ভূমিকা

আশীষের রক্ষণের পারফরম্যান্সে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। এই মরসুমে তিনি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রফেশনাল ডিফেন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি প্রতিটি ম্যাচে গড়ে চারটি ডুয়েল জয় এবং চারটি পজিশন পুনরুদ্ধার করছেন, যা তার ডিফেন্সিভ পারফরম্যান্সকে আরও দৃঢ় করেছে। মোহনবাগান বর্তমানে পাঁচটি ক্লিন শিটও পেয়েছে তার উপস্থিতির কারণে, এবং আশীষ বার বার বিপজ্জনক উইঙ্গারদের থামিয়ে দিয়েছে। তার কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসী ডিফেন্সের জন্য এই দলটি অনেক দৃঢ় হয়ে উঠেছে।

এছাড়া, তার গতি এবং শারীরিক উপস্থিতি প্রতিপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে প্রতিটি ম্যাচে তার দারুণ কভারেজ এবং ট্যাকল করার দক্ষতা দেখিয়েছে, যা তার উন্নতির প্রমাণ।

ভারতের প্রধান রাইট-ব্যাক হওয়ার পথে?

আশীষ এই মরসুমের খুবই ভালো পারফরম্যান্স করছে এবং তার উত্থান ভারতের জাতীয় দলের রাইট-ব্যাক পজিশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা তৈরি করেছে। তার ধারাবাহিকতা যদি একই রকম থাকে, তাহলে ভারতীয় দলের জন্য একজন নির্ভরযোগ্য রাইট-ব্যাক হিসেবে তাকে দেখা যেতে পারে। তবে, তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।

আশীষ রাই অবশ্যই এই মরসুমে মোহনবাগান এবং তার নিজের খেলার জন্য এক নতুন দিশা তৈরি করেছে, এবং হোসে মোলিনার মতো একজন অভিজ্ঞ কোচের অধীনে তার উন্নতি অব্যাহত থাকবে বলেই আশা করা হচ্ছে।