মূল্যবান চমকদার সব জিনিষ যেমন তিমি মাছের বমি, কচ্ছপের হাড়, সাপের বিষ আরও হরেক চোরাই মাল! বাজেয়াপ্ত করা তালিকা দেখলে চমক লাগবেই। সোনা-রুপো, মাদক তো আছেই। বাংলাদেশের (Bangladesh) সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) বিজিবি (BGB) প্রকাশ করেছে গত বছর (২০২৪) সালে উদ্ধার করা চোরাই সামগ্রীর তালিকা।
বিজিবি অভিযানে ২০২৪ সালে ২,১৮৪ কোটি ২৮ লক্ষাধিক টাকার (বাংলাদেশি টাকা) চোরাচালান পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিপুল চোরাচালান হয়ে থাকে। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি ও বিএসএফ) প্রতি বছর বাজেয়াপ্ত করা চোরাই সামগ্রীর তালিকা প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমান্ত:
বাংলাদেশের সঙ্গে আছে ভারত ও মায়ানমার দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ১৫৬.৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে। এটি বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমান্ত। এই আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশের খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিং, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ পড়ছে। আর ভারতের দিকে অসম (২৬২ কিমি), ত্রিপুরা (৮৫৬ কিমি), মিজোরাম (১৮০ কিমি), মেঘালয় (৪৪৩ কিমি) এবং পশ্চিমবঙ্গ (২,২১৭ কিমি)।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২০২৪ সালের ০১ জানুয়ারি হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ২,১৮৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
বাজেয়াপ্ত করা চোরাচালান পণ্যের মধ্যে রয়েছে-
১৩১ কেজি ৪২৪ গ্রাম সোনা,, ১৩৭ কেজি ২৮৯ গ্রাম রুপো, ২,১৪,৮০৫টি শাড়ি, ২,১০,০৬৩টি থ্রিপিস/লেহেঙ্গা/তৈরী পোশাক, ৩৩,২২,৩৬১টি কসমেটিক্স সামগ্রী, ৭০,১৫,৮২৪ কেজি চিনি, ৫৮,২৭৪ কেজি চা পাতা, ২,৩৫,৪৪৬ কেজি পিঁয়াজ, ৩,৩৮,৪৯৭ কেজি রসুন, ৬৫,২৯৮ কেজি জিরে, ৮৯,৩৬৫ কেজি মাছ, ৪,৩১,৪০৭ কেজি সুপারি, ৪৮,৫৯৮ ঘনফুট কাঠ, ৬,০৫৩ ঘনফুট পাথর, ৭,৩৭,১৮০ কেজি কয়লা, ৬১,১৪৪টি ইমিটেশন গহনা।
পুরাতন মূর্তি, তিমির বমি-সহ তালিকায় আছে
১৭টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১৪ কেজি ৮১ গ্রাম সাপের বিষ, ৮ কেজি ৩৯৮ গ্রাম তিমির বমি (অ্যাম্বারগ্রিস), ৩৩,১৩২ কেজি কারেন্ট জাল, ১২,৬৭,১৪৮ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ২৫,৬২৪ কেজি সার, ১২,২৬২ লিটার ডিজেল/পেট্রোল/অকটেন, ৯,৯০৭টি মোবাইল, ১,০০,০০৫টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৩,৬০,২৮৮পিস চশমা, ১০,৩২,০৯৪ পিস চকলেট, ২,৭৮,২৫৩ প্যাকেট বিস্কুট, ২,১৮০ প্যাকেট কীটনাশক, ৩৮ কেজি ৪০০ গ্রাম কচ্ছপের হাড়, ২,৫১,৬৪,৫০৭ পিস আতশবাজী, ২০৭টি ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান, ০৮টি বাস, ৪৭টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯১টি পিকআপ, ৩৮৩টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৮৭৩টি মোটরসাইকেল এবং ২৩৫টি বাই-সাইকেল।
বাজেয়াপ্ত করা আগ্নেয়াস্ত্র
সীমান্তে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৩৮টি পিস্তল,৫টি এসএমজি, ১৮টি গ্রেনেড, ৮টি রাইফেল, ৬টি রিভলভার, ৫২টি সকল প্রকার গান, ৮,৮৫৯ গোলাবারুদ, ৪৫টি ম্যাগাজিন, ৪টি মর্টার শেল, ৪১টি ককটেল, ১০. ৪৪ কেজি গান পাউডার, এবং ২৩৩টি ব্লাংক কার্টিজ।
বাজেয়াপ্ত মাদক সামগ্রী
বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ৯২,১৬,৮৭৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৮৪ কেজি ৭৯১ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৩১ কেজি আফিম, ২,১৪,০২৮ বোতল ফেনসিডিল, ২,৩৯,৩৭২ বোতল বিদেশী মদ, ৭,৭৭৯ লিটার বাংলা মদ, ১,৮৪,২৮০টি মদ তৈরির ট্যাবলেট, ১৩,২৬৬ ক্যান বিয়ার, ১৫,৭৮২ কেজি গাঁজা, ২৬৪ কেজি ৮৪ গ্রাম হেরোইন, ৬,০২৪ কেজি ৩৫৩ গ্রাম কোকেন, ১৪৭ বোতল এলএসডি, ৮৯,০৭,৩৪৩টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৩৬,১৭৩টি ইস্কাফ সিরাপ, ১১১,১০,৫৪৮টি বিভিন্ন প্রকার ঔষধ, ১২,৫১০ বোতল এমকেডিল/কফিডিল, ১২,৭৩,৪১২টি নেশা জাতীয় ও উত্তেজক ইনজেকশন এবং ৫৭,৭০,৭৫৭টি অন্যান্য ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
চোরাকারবারি গ্রেফতার তালিকা:
২০২৪ সালে সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২,০৮৮ জন ধরা পড়েছে।
অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতার
বিজিবি জানিয়েছে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ২,৬৭৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক, ১৫৫ জন ভারতীয় নাগরিক এবং ১৪,৩৩৬ জন মায়ানমারের নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।