পূর্ব মেদিনীপুরের বিধায়কদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের রাশ তাঁর হাতেই রয়েছে। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনের পর এই ফোনে পাঁচ মিনিটের সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “যে যাই ভাবুন, আমিই দলের চেয়ারপার্সন, আমিই দল চালাব। দশ বছর চালাব।” এই বক্তব্যটি দলের মধ্যে এবং রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নবীন বনাম প্রবীণ এই বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল, যা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল তৃতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এই বিভাজন বড় আকার নেয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০২৪ সালেও দলের অন্দরেই এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ১ জানুয়ারি বিভিন্ন নেতার মন্তব্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতি ফের শিরোনামে আসে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, “রাজনীতিতে একটা ঊর্ধ্বসীমা থাকা দরকার। ৪০-৫০ বছরের যুবক যে পরিশ্রম করতে পারে, তা ৭০-৭৫ বছর বয়সে একজন নেতা করতে পারবেন না।”
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কখনওই বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে গুরুত্ব দেননি। তিনি সম্প্রতি বলেছিলেন, “কীসের বয়স? মানুষের মনের কি কোনো বয়স আছে? যতদিন বাঁচবেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো বাঁচবেন।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, বয়স কখনওই তাঁর রাজনৈতিক শক্তির পথে বাধা হতে পারে না।
মমতার এই মন্তব্যের পর, বিরোধী শিবিরে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যে চ্যালেঞ্জ এসেছে, তা হচ্ছে দলের অধিকার নেওয়া এবং এখন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার চেয়েছেন।” তিনি এটিকে একটি পারিবারিক ঝগড়া ও ক্ষমতা দখলের প্রশ্ন হিসেবে দেখছেন।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও মমতার মন্তব্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গিয়েছেন, তিনি দলে আনচ্যালেঞ্জড নন, তাই বারবার দলকে শক্তিশালী করতে বার্তা দিচ্ছেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই শক্তিশালী বার্তা যে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে দেওয়া, তা স্পষ্ট। ২০২৪ সালে তৃণমূলের লক্ষ্য হতে পারে রাজ্যের বাইরে, তবে দলের ভিতরে নেতৃত্বের প্রশ্ন এবং কৌশলগত পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মমতা যে নিজের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে চান, সেটি তাঁর এই বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
এবার দেখার বিষয় হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের অভ্যন্তরীণ শক্তির সমন্বয় কীভাবে হয়ে ওঠে, এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কেমন হবে।