অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ২০২৫-এ (Australian Open 2025) বুধবার একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, কারণ দুই গ্রেট নোভাক জোকোভিচ এবং কার্লোস আলকারাজ একের পর এক নতুন কীর্তি গড়েছেন। এইদিন জোকোভিচ রজার ফেডেরারের দীর্ঘস্থায়ী গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসে নতুন পাতা যুক্ত করেছেন, আর আলকারাজ মাত্র ৮১ মিনিটে তার প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নতুন এক রেকর্ড স্থাপন করেছেন।
জোকোভিচের রেকর্ড ভাঙা জয়
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে পর্তুগালের হাইমে ফারিয়াকে ৬-১, ৬-৭, ৬-৩, ৬-২ সেটে পরাজিত করে রজার ফেডেরারের গ্র্যান্ড স্ল্যামে সর্বোচ্চ ৪৩০ জয় রেকর্ডকে টপকে যান। এটি ছিল জোকোভিচের ৪৩১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়, যা তাকে ইতিহাসে নতুন জায়গায় নিয়ে গেছে। এই রেকর্ড ভাঙার পর জোকোভিচ নিজেই তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন, “আমি টেনিস এবং এই প্রতিযোগিতাকে খুব ভালোবাসি। তাই প্রতি বার নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। গত ২০ বছর ধরে গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলছি। জয় বা পরাজয় যাই হোক, আমি সবসময় মনপ্রাণ উজাড় করে খেলি। গ্র্যান্ড স্ল্যামই আমাদের খেলাধুলার মূল ভিত্তি। এর চেয়ে বড় কিছু নেই। গ্র্যান্ড স্ল্যাম নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে।”
জোকোভিচের ক্যারিয়ারে এটি ছিল ১৭তমবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে উঠার ঘটনা, যা নিজেও একটি রেকর্ড। এই ম্যাচে দ্বিতীয় সেটে জোকোভিচ পরাজিত হলেও তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে দুর্দান্ত খেলতে গিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। ফারিয়ার দুর্দান্ত সার্ভ এবং ফোরহ্যান্ডের প্রশংসা করেছেন জোকোভিচ, যিনি এই ম্যাচে বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
আলকারাজের নতুন কীর্তি
অন্যদিকে, ২০২৫ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের একটি মজাদার ঘটনা হলো তরুণ টেনিস তারকা কার্লোস আলকারাজের দুর্দান্ত জয়। স্পেনের এই ২০ বছর বয়সী খেলোয়াড় জাপানের ইয়োশিহিতো নিশিয়োকাকে ৬-০, ৬-১, ৬-৪ সেটে পরাজিত করেন। বিশেষ করে তার ‘এস’ সার্ভিস ছিল দুর্দান্ত, যা প্রতিপক্ষের জন্য একেবারেই প্রতিরোধ করা অসম্ভব ছিল। এই ম্যাচে তিনি ১৪টি ‘এস’ সার্ভিস মেরেছেন, যা আলকারাজের সার্ভিং দক্ষতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
আলকারাজ মাত্র ৮১ মিনিটে এই ম্যাচটি শেষ করে নিজের কীর্তি গড়েছেন এবং তার সার্ভিং নিয়ে তিনি নিজেই মজা করেছেন। ম্যাচ শেষে ক্যামেরায় সই করার সময় আলকারাজ লিখেছেন, “আমি কি একজন সার্ভবট?” এই কথার মাধ্যমে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে উদ্ভূত ‘চ্যাটবট’-এর সঙ্গে নিজের সার্ভিং দক্ষতার তুলনা করে মজার ছলে নিজের নামকরণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “গ্র্যান্ড স্ল্যামের প্রাথমিক রাউন্ডে কম সময় কোর্টে কাটানো গুরুত্বপূর্ণ। শরীর তরতাজা রয়েছে। সার্ভিস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি, যা কাজে লেগেছে।”
আগামী দিনের জন্য অপেক্ষা
এদিন জোকোভিচ এবং আলকারাজের জয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে প্রতিযোগিতা আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উভয়ের জয় তাদের পরবর্তী রাউন্ডে একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো করেছে। যদি সেই অবস্থান হয়, তাহলে একটি মেগা দ্বৈরথ হতে চলেছে, যেখানে টেনিস প্রেমীরা দুটি প্রজন্মের গ্রেটকে একসঙ্গে খেলতে দেখতে পাবেন।
ফেডেরারের রেকর্ড ভেঙে জোকোভিচের সফলতা এবং আলকারাজের তরুণ প্রজন্মের শক্তি নতুন যুগের টেনিস প্রতিযোগিতার একটি চমৎকার প্রতিচ্ছবি। এই মুহূর্তগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, টেনিস বিশ্বে প্রতিযোগিতা কখনো থেমে থাকে না, এবং নতুন রেকর্ড তৈরি হওয়া এবং পুরনো রেকর্ড ভাঙার প্রক্রিয়া অবিরত চলতে থাকে।
এছাড়া, এই জয়ের মাধ্যমে জোকোভিচ আরও একবার প্রমাণ করলেন কেন তিনি টেনিস বিশ্বে এক কিংবদন্তি। তবে আলকারাজের নতুন রেকর্ড এবং তার সার্ভিং দক্ষতা টেনিসের ভবিষ্যতের দিকে আরও একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তন করেছে।