কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের দ্বারস্থ হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল, অভিযোগ কার বিরুদ্ধে?

ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ২০২৪-২৫ মরসুমে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal FC)কার্যত ঘুরে দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। মরশুম শুরুতেই টানা সাত ম্যাচে পয়েন্ট হাতছাড়া। যদিও এখন ১৫…

Oscar Bruzon on East Bengal FC Footballer Anwar Ali & Cleiton Silva

ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ২০২৪-২৫ মরসুমে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal FC)কার্যত ঘুরে দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। মরশুম শুরুতেই টানা সাত ম্যাচে পয়েন্ট হাতছাড়া। যদিও এখন ১৫ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে একাদশ স্থানে রয়েছে কলকাতা ময়দানের এই প্রধান। যদিও দলের দায়িত্ব নিয়েই প্রথম ছয়ে শেষ করার অঙ্ক কষে দিয়েছিলেন অস্কার ব্রুজো। তবে সে সব এখন অতীত। বাকি আর মাত্র নয়টি ম্যাচ, তাই সব ম্যাচেই তিন পয়েন্ট লক্ষ্য লাল-হলুদ শিবিরের। কিন্তু এই অবস্থায় ক্লাব কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, চলতি আইএসএলে রেফারিংয়ের কারণে তাদের পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে।

গত ১৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মিডিয়া সেন্টারে একটি সাংবাদিক বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। এদিন ক্লাবের সাধারণ সচিব রূপক সাহা, ফুটবল সচিব সৈকত গাঙ্গুলি এবং কর্মসমিতির সদস্য দেবব্রত সরকার সাংবাদিকদের সামনে এসে দাবি করেন যে, আইএসএলে নিয়মিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ভুল রেফারিং করা হচ্ছে। এরই মধ্যে একাধিক বিতর্কিত ম্যাচের উদাহরণ তুলে ধরে তারা অভিযোগ করেন যে, খারাপ রেফারিংয়ের কারণে দলের ফলাফল প্রভাবিত হচ্ছে।

   

ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ এই সাংবাদিক বৈঠকে একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন, যেখানে দেখা যায় কীভাবে আইএসএলের বেশিরভাগ ম্যাচে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। তারা দাবি করেন, “আইএসএল একটি প্রাইভেট ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট, যেখানে বিভিন্ন কোম্পানি দলগুলোর উপর টাকা ঢালছে। আর এই কারণেই আইএসএল কেবল ধনী এবং ক্ষমতাশালী দলগুলোকেই সুবিধা দিচ্ছে।” তারা আরও যোগ করেন, “এমনকি এটি হতে পারে যে আইএসএল কর্তৃপক্ষ এক শহর থেকে একমাত্র একটি ক্লাবকে নিয়ে কাজ করছে, এবং এর ফলস্বরূপ ইস্টবেঙ্গলকে অবিচারের শিকার হতে হচ্ছে।”

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, তারা আর ফেডারেশনের ওপর আস্থা রাখতে পারেন না এবং এখন সরাসরি কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে অভিযোগ জানাতে চলেছেন।

কলকাতা ডার্বি এবং রেফারিংয়ের বিতর্ক

গত ১১ জানুয়ারি গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ গোলে পরাজিত হতে হয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে। তবে, ম্যাচটির শেষে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রথমার্ধের একেবারে শেষলগ্নে পিভি বিষ্ণুর নেওয়া শট বাগান ফুটবলার আপুইয়ার হাতে বল লেগেছিল, কিন্তু রেফারি তা হ্যান্ডবল বলে ঘোষণা করেননি। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা পেনাল্টির দাবি তুললেও রেফারি তাদের দাবি অগ্রাহ্য করেন। যদি ওই সময় পেনাল্টি দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো ম্যাচের ফলাফল কিছুটা আলাদা হতে পারত।

এ বিষয়ে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো বলেন, “আপুইয়ার হাতে বল লাগা একটি স্পষ্ট পেনাল্টি ছিল, কিন্তু রেফারি তা অগ্রাহ্য করেছেন। মোহনবাগান সুবিধা পেয়েছে।” এছাড়া, তিনি আরও দাবি করেন, ইস্টবেঙ্গলকে যে নিয়মিত রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হতে হচ্ছে, তা পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট। চলতি আইএসএল-এ সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড পেয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ১৪ ম্যাচে তাদের ৭টি লাল কার্ড হয়েছে, যা আইএসএলে অন্য কোনো দলের তুলনায় বেশি। এছাড়া, ফাউল এবং হলুদ কার্ডের পরিসংখ্যানে ইস্টবেঙ্গল রয়েছে শীর্ষে।

ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অবিচার

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শীর্ষকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতি অবিচার হচ্ছে। তারা মনে করেন, তাদের বিরুদ্ধে কিছু গভীর ষড়যন্ত্র চলছে যাতে তারা আইএসএলে ভালো করতে না পারে। ক্লাব কর্তারা বলছেন, “আমাদের মনে হচ্ছে যে আমরা এখনও শরণার্থী ক্লাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছি, এবং তাই আমাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের অবিচার করা হচ্ছে।” তারা আরও দাবি করেছেন যে, আইএসএল কর্তৃপক্ষের ‘ওয়ান সিটি ওয়ান টিম’ নীতির কারণে তাদের বিরুদ্ধে অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে।

এর আগে, কোচ ব্রুজোও রেফারির খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “কিছু খেলোয়াড়কে অযথা হলুদ কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা পরবর্তীতে তাদের সাসপেনশন সৃষ্টি করছে।” এছাড়া, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের দাবি, আইএসএল কর্তৃপক্ষ ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বৈমাত্রেয় আচরণ করছে এবং সম্ভবত তারা এক শহরের মধ্যে একমাত্র দলকেই ভালোভাবে দেখতে চায়।

কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে অভিযোগ

এখন ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ আইএসএল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে সরাসরি কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে যাবেন। তারা জানিয়েছেন, “ফেডারেশনের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা শীঘ্রই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাব এবং ভারতীয় ফুটবলের পরিস্থিতি নিয়ে হস্তক্ষেপের দাবি করব।”

সাধারণ সচিব রূপক সাহা বলেছেন, “আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আইএসএলের প্রায় প্রতিটি ম্যাচে আমাদের বিরুদ্ধে ভুল রেফারিং হচ্ছে। এটা ভাবতে বাধ্য করছে যে, আমরা এখনও শরণার্থী ক্লাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছি।”