দিল্লির রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ল। দুর্নীতি ইস্যুতে দিল্লির (Delhi Politics) মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে (Arvind Kejriwal) তীব্র আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। সম্প্রতি দিল্লির সীলামপুরে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধী কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, তিনি দিল্লির জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং রাজ্য থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
শীলা দীক্ষিতের দিল্লি বনাম কেজরিওয়ালের দিল্লি
রাহুল গান্ধী বলেন, “আপনারা কি সেই দিল্লি মনে করতে পারেন যখন শীলা দীক্ষিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন? তখন দিল্লি ছিল পরিচ্ছন্ন, উন্নত, এবং মানুষের জীবন ছিল অনেক ভালো। শীলা দীক্ষিতের আমলে দিল্লি সত্যিকারের উন্নয়নের সাক্ষী ছিল।” তিনি কেজরিওয়ালের সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, “অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছিলেন তিনি দিল্লি পরিচ্ছন্ন করবেন এবং দুর্নীতিমুক্ত করবেন। কিন্তু আজকের দিল্লি দেখুন। এখানে দূষণ, অব্যবস্থা, এবং দুর্নীতি চরমে।”
মিথ্যা প্রতিশ্রুতির রাজনীতি
রাহুল গান্ধী আরও বলেন, “অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং নরেন্দ্র মোদির রাজনীতিতে কোনো পার্থক্য নেই। দুজনেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেন। দিল্লির জনগণকে তিনি যে ‘দুর্নীতিমুক্ত সরকার’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দুর্নীতি কমার পরিবর্তে বেড়েছে এবং জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে।”
দিল্লির বর্তমান অবস্থা ও দূষণ সমস্যা
রাহুল গান্ধী দিল্লির দূষণ সমস্যা নিয়েও কেজরিওয়ালের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আজ দিল্লির বাতাসে শ্বাস নেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এটা কি সেই দিল্লি যা কেজরিওয়াল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? তার সরকারের ব্যর্থ নীতির কারণে দিল্লির পরিবেশ এবং জনজীবন চরম বিপদে পড়েছে।”
জোট ভাঙার ইঙ্গিত?
রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য কংগ্রেস এবং আপ (আম আদমি পার্টি)-এর মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়াবে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে। ইতিমধ্যেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-এর মধ্যে কংগ্রেস এবং আপ-এর মতবিরোধ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে এই সরাসরি আক্রমণ জোটের অভ্যন্তরীণ সংকটকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
রাজনৈতিক কৌশল নাকি বাস্তব সমস্যা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য মূলত আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের শক্তি বাড়ানোর কৌশল। আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে দূরত্ব বাড়লে দিল্লিতে কংগ্রেস নতুনভাবে জমি ফিরে পেতে পারে। তবে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কি বাস্তব, নাকি এটি শুধুই রাজনৈতিক কৌশল, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্যের পর দিল্লির রাজনীতিতে উত্তেজনা বেড়েছে। আপ সমর্থকরা এই বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে, কংগ্রেস সমর্থকরা মনে করছেন, এটি সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন। দিল্লির জনগণ কেজরিওয়ালের কাছ থেকে যে পরিবর্তনের আশা করেছিলেন, তা তিনি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন।
দিল্লির রাজনৈতিক ময়দানে এই বিতর্ক এখন চরমে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও রাহুল গান্ধীর মধ্যে এই বাকযুদ্ধ শুধু দিল্লি নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা।