“ডার্বিতে হ্যান্ডবল নয়…” ভারতের চিফ রেফারিং অফিসারের মন্তব্যে তোলপাড়

১২ জানুয়ারি, শনিবার আইএসএলের (ISL) ফিরতি ডার্বিতে (Kolkata Derby) মোহনবাগান (Mohun Bagan SG) ১-০ গোলে পরাজিত করে ইস্টবেঙ্গলকে (East bengal FC)। ম্যাচের ফলাফলের পাশাপাশি রেফারিং…

AIFF Chief Refreeing Officer comment on Kolkata Derby Handball Issue

১২ জানুয়ারি, শনিবার আইএসএলের (ISL) ফিরতি ডার্বিতে (Kolkata Derby) মোহনবাগান (Mohun Bagan SG) ১-০ গোলে পরাজিত করে ইস্টবেঙ্গলকে (East bengal FC)। ম্যাচের ফলাফলের পাশাপাশি রেফারিং নিয়ে বেশ তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে। বিশেষত, ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো অভিযোগ করেছিলেন যে, তাদের দুটি পেনাল্টি পাওয়ার অধিকার ছিল, যা রেফারি খোলসা করেননি। এবার হ্যান্ডবল ইস্যুতে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) চিফ রেফারিং অফিসার (Chief Refereeing Officer) ট্রেভর কেটেলের (Trevor Kettle) করা মন্তব্যে তোলপাড় বাংলার ফুটবল মহল।

ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ইস্টবেঙ্গলের পিভি বিষ্ণুর শট বাগানের ডিফেন্ডার আপুইয়ার হাতে লেগে যাওয়ার বিষয়টি। যদিও লাল-হলুদ ফুটবলাররা তা পেনাল্টি হিসেবে দাবি করেছিলেন, কিন্তু রেফারি সে আবেদন বাতিল করে খেলা চালিয়ে যান। এই সিদ্ধান্তের পর ইস্টবেঙ্গল শিবিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং অনেকেই রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

   

তবে, সর্ব ভারতের ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) মুখ্য রেফারিং অফিসার ট্রেভর কেটল এই বিতর্কের সমাপ্তি ঘটিয়ে জানিয়েছেন, বিষ্ণুর শটটি যখন আপুইয়ার হাতে লেগেছিল, তখন তা হ্যান্ডবল ছিল না। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে কেটল বলেন, “হ্যান্ডবল নিয়ে আমাদের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, বলটি হাতে লাগলে তা স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল কি না। পেনাল্টি বক্সের ভিতরে বল হাতে লাগলে রেফারি তখনই প্রশ্ন করেন, ফুটবলারের হাত কি সঠিক অবস্থানে ছিল? যদি হাত সঠিক অবস্থানে থাকে, তবে সেটা হ্যান্ডবল হিসেবে ধরা হয় না।”

কেটল আরও জানান, সেদিনের ম্যাচে রিভিউ প্যানেল এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং প্রাক্তন ফিফা রেফারিরা এবং এএফসি রেফারি অ্যাসেসররা একমত হন যে, ওই ঘটনাটি হ্যান্ডবল ছিল না। তাই রেফারি খেলা থামিয়ে পেনাল্টি না দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।

বিতর্কে উত্তেজনা

ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টির দাবি বাতিলের পর, শুধু ইস্টবেঙ্গল শিবিরই নয়, বেশ কিছু প্রাক্তন ফুটবলার এবং ম্যাচের ধারাভাষ্যকাররাও রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। তাদের মতে, ইস্টবেঙ্গল কিভাবে পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হল, তা খুবই হতাশাজনক ছিল। তবে, ট্রেভর কেটল এসব অভিযোগ একদম উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, “আমরা ৫ জনের একটি প্যানেল নিয়ে এই ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রত্যেকেই একমত হয়েছেন যে, এটি কোনোভাবেই হ্যান্ডবল ছিল না। যদি আমি রেফারির জায়গায় থাকতাম, আমি ঠিক একইভাবে সিদ্ধান্ত নিতাম।”

রেফারিং মান নিয়ে আলোচনা

ভারতীয় ফুটবলে রেফারিং বিষয়ক বিতর্ক নতুন নয়। বিভিন্ন ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রসঙ্গে ট্রেভর কেটল মন্তব্য করেন, “ফুটবলারদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তারা অনেক সময় ভুল করে। আমাদের কাছে ১৫ জন রেফারির প্যানেল রয়েছে এবং তাদের দায়িত্ব হচ্ছে ১১৯টি ম্যাচ পরিচালনা করা। যদিও তাতে কিছু ভুল হয়, তবে রেফারির সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সব সময় সজাগ থাকি। গত বছর সাকসেস রেট ছিল ৮৫ শতাংশ, আর এই বছর এখন পর্যন্ত তা ৮২.৫ শতাংশ রয়েছে। আই লিগেও ৮৫ শতাংশ সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

কেটল আরও বলেন, “এটা কোনোভাবেই সহজ কাজ নয়। রেফারিদের রেটিং দেওয়ার জন্য আরও ম্যাচ প্রয়োজন। তবে তারা যথাসম্ভব সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করেন।”

ভার আনার প্রসঙ্গ

ভারতীয় ফুটবলে রেফারিং সিস্টেম উন্নত করার জন্য ‘ভার’ (ভ্যারিয়েবল অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিং) আনা খুবই প্রয়োজন, এমন দাবিও অনেকদিন ধরে উঠছে। কিন্তু সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এখনও ভার সিস্টেম নিয়ে সিদ্ধান্তে আসেনি। ট্রেভর কেটল এই বিষয়ে জানান, “২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমি গত বছর মার্চে এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম। তবে ফেডারেশন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, তাদের একার পক্ষে ভারের খরচ বহন করা সম্ভব নয়।”

এছাড়া, কেটল বলেন, “ভার সিস্টেমটি অনেক খরচসাপেক্ষ। এখনই এটি প্রয়োগ করা সম্ভব না হলেও ভবিষ্যতে এটি নিয়ে চিন্তা করা হবে।”