বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটে টেস্ট ক্রিকেটের (Test Cricket) ভবিষ্যত নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর আলোচনা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) এবং বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট বোর্ডগুলির (Cricket Board) মধ্যে আলোচনা চলছে একটি নতুন কাঠামো প্রবর্তন নিয়ে, যা টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যতকে নতুন দিশা দিতে পারে। এই নতুন কাঠামোটি হতে পারে দুই স্তরের টেস্ট ক্রিকেট (Two Tier Test System), যা মূলত ভারত (BCCI), অস্ট্রেলিয়া (CA), ইংল্যান্ড (ECB) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেটের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে খেলাধুলার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা। তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে টেস্ট ক্রিকেটের বিশ্বকাপের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে।
দুই স্তরের টেস্ট কাঠামো: কি হতে পারে?
বর্তমান পরিস্থিতিতে, টেস্ট ক্রিকেটের বেশিরভাগ ম্যাচের আয়োজনে সব দেশের জন্য সমান সুযোগ নেই। উন্নত দেশগুলো যেমন ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ভালো ব্যবসায়িক সুবিধা পায় তাদের জনপ্রিয় সিরিজগুলির মাধ্যমে। অন্যদিকে ছোটো দেশগুলো যেমন বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে বা শ্রীলঙ্কা কষ্টে পড়ে টেস্ট সিরিজের আয়জন করতে। এই অসমতা কমাতে, এক নতুন কাঠামো প্রস্তাবিত হয়েছে। যা দুটি স্তরে টেস্ট ক্রিকেটকে ভাগ করবে। এর মধ্যে একটি স্তরে থাকবে ক্রিকেটের শীর্ষ দেশগুলি, যেগুলি একে অপরের সঙ্গে বেশি সিরিজ খেলবে। অন্য স্তরে থাকবে ছোট দেশগুলো, যাদের সাথে খেলার সুযোগ কম হবে।
এই প্রস্তাবনাটি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে এবং সম্প্রতি ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় ক্রিকেট বোর্ডগুলি এই বিষয়টি নিয়ে একসাথে আলোচনা করছে। বিশেষ করে, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, যা সম্প্রতি রেকর্ড ভেঙে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, এই আলোচনা আরও উজ্জীবিত করেছে। সিরিজটি বিশ্বজুড়ে টিভি এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিপুল সংখ্যক দর্শক আকর্ষণ করেছে, যা বোঝায় যে, এই ধরনের সিরিজ আরও বাড়ানো যেতে পারে।
বিষয়টি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে
দুই স্তরের কাঠামো প্রবর্তিত হলে, প্রথম সারির দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি সিরিজ খেলতে পারবে। এর ফলে তাদের মধ্যে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে, যা টেস্ট ক্রিকেটকে আরও আকর্ষণীয় এবং ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক করে তুলবে। বড় দেশগুলির মধ্যে এই সিরিজগুলির টিভি, স্টেডিয়াম দর্শক এবং স্পন্সরশিপের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসবে, যা তাদের জন্য লাভজনক হবে। এতে তারা আরও বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলতে আগ্রহী হবে।
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং কোচ রবি শাস্ত্রী এই ধরনের কাঠামোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “যদি আপনি টেস্ট ক্রিকেটকে জীবিত রাখতে চান, তাহলে শীর্ষ দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে বেশি খেলবে এবং এতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। আপনাকে মানসম্মত প্রতিযোগিতা দেখতে হবে।”
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ভবিষ্যত কী হবে?
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে, দুই স্তরের কাঠামো চালু হলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ভবিষ্যত কী হবে। বর্তমানে এটি হচ্ছে এক দুই বছরব্যাপী টুর্নামেন্ট, যেখানে টেস্ট ক্রিকেট খেলা সকল দেশ একে অপরের সাথে সিরিজ খেলেই পয়েন্ট সংগ্রহ করে ফাইনালে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। তবে, দুটি স্তরে বিভক্ত হলে প্রথম স্তরের দেশগুলির মধ্যে যেহেতু অধিক ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে, তাদের জন্য এটি আরও লাভজনক হবে এবং তাদের মধ্যে একটা স্বতন্ত্র প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। ফলে, ছোট দেশগুলোর জন্য টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে এবং তাদের পক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অংশগ্রহণ কঠিন হতে পারে।
এছাড়া, ছোটো দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের জন্য টেস্ট সিরিজ আয়োজন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে, একটি নতুন কাঠামো চালু হলে আইসিসি এবং বড় দেশগুলিকে ছোট দেশগুলোর এই উদ্বেগের সমাধান করতে হবে, যাতে টেস্ট ক্রিকেটের বিকাশে সামগ্রিক উন্নতি হয় এবং সকল দেশের জন্য সুযোগ তৈরি হয়।
বিশ্বের ছোট দেশগুলির উদ্বেগ
বিশ্বের ছোট দেশগুলো, যেমন জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সহ অন্যান্য, এই নতুন কাঠামোতে খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের অভিযোগ হল, এতে তাদের সুযোগ কমে যাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে তারা টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে। এসব দেশগুলো তাদের খেলার সুযোগ বজায় রাখতে চায় এবং আশা করে যে, তাদের বিরুদ্ধে শীর্ষ দেশগুলো খেলার সুযোগ কখনো হারাবে না।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
যদিও এখনও এই দুটি স্তরের কাঠামো সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে বিশ্ব ক্রিকেটে এটি একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ২০২৭ সালের পরে এই পরিবর্তন বাস্তবায়িত হতে পারে, তবে তার আগেই একটি বিশেষ সভার মাধ্যমে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ভবিষ্যত, দুই স্তরের কাঠামো এবং ছোট দেশগুলির উদ্বেগ এই সমস্ত বিষয়গুলি ক্রিকেটের ভবিষ্যতের পথচলার দিশা নির্ধারণ করবে।