রাজ্য সরকারের বাংলার বাড়ি (Awas Yojana) প্রকল্পের আওতায় একসঙ্গে শুরু হতে চলেছে ১২ লক্ষ বাড়ি তৈরির কাজ। এটি রাজ্যের ইতিহাসে একটি বিশাল নির্মাণ প্রকল্প, যা গরিব মানুষদের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। তবে, এই প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে হলে একাধিক দিকের নজরদারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, বাড়ি তৈরির (Awas Yojana) জন্য রাজমিস্ত্রির এবং নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। ১২ লক্ষ বাড়ি তৈরির জন্য যেমন প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট, ইট, লোহা, সুরক্ষিত কাঁচামাল, তেমনই রাজমিস্ত্রির চাহিদাও বাড়বে। এ কারণেই, বিডিওদের কাছে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বিক্রেতারা যেন নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে, ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে ন্যায্যমূল্যে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে, পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার নিজে জেলা-জেলা গিয়ে কাজের তদারকি করছেন। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলায় বৈঠক করে, তিনি জেলাশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন কীভাবে বাড়ি তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করা যায়। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষ উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। তবে, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে হলে বাড়ির নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, এ বিষয়ে জেলাশাসকদের যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর বুধবারই সকল জেলাকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, প্রথম পর্যায়ের কাজ ৩-৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে, এবং তবেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার যোগ্যতা তৈরি হবে। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। এক্ষেত্রে, রাজ্যের দেওয়া অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, জেলা, ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে, তারা প্রতি মাসে অন্তত একবার বাড়ি তৈরির কাজ পরিদর্শন করে রিপোর্ট পাঠাবে। বিডিও অফিসে একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হবে, যাতে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। উপভোক্তাদের সচেতন করতে ভিডিও ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানো হবে, যাতে তারা প্রকল্পের নিয়ম-কানুন এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সচেতন হন।
নবান্নের এক কর্তার মতে, এই বিশাল সংখ্যক বাড়ি একসঙ্গে তৈরি হওয়ায় রাজ্যে নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তেমনই, রাজমিস্ত্রির চাহিদাও বেড়ে যাবে। এর জন্য একটি সিস্টেমের মধ্যে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে, যাতে গরিব মানুষ দ্রুত তাদের মাথার উপর ছাদ পেতে পারেন।
এছাড়া, রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য এই প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১২ লক্ষ গৃহহীন মানুষের জন্য এটি একটি বিরাট উদ্যোগ, যা শুধু তাদের জন্য নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্যও অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।