মেরুজ্যোতি, এক মনমুগ্ধকর দৃশ্য, সৃষ্টির কারণ কী?

Aurora: মানুষ ভালোবাসে প্রকৃতি,আর মুগ্ধ হয় তার অপার সৌন্দর্য্যে। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দৃশ্যগুলির মধ্যে অরোরা বা মেরুজ্যোতি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই মেরুজ্যোতি…

aurora

Aurora: মানুষ ভালোবাসে প্রকৃতি,আর মুগ্ধ হয় তার অপার সৌন্দর্য্যে। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দৃশ্যগুলির মধ্যে অরোরা বা মেরুজ্যোতি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই মেরুজ্যোতি দেখা যায় উচ্চ অক্ষাংশের (৬৬°উত্তর ও ৬৬° দক্ষিণ) দেশ গুলো থেকে, যেমন-নরওয়ে, সুইডেন, গ্রীনলেন্ড, উত্তর রাশিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, তাসমানিয়ার ও অ্যান্টার্কটিকা।পৃথিবীর উত্তর মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট মেরুজ্যোতি অরোরা বোরিয়ালিস বা নর্দান লাইট বা সুমেরুজ্যোতি নামে পরিচিত এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট মেরুজ্যোতি অরোরা অস্টালিস বা সাউদার্ন লাইট বা কুমেরুজ্যোতি নামে পরিচিত।

এখন দেখা যাক এই মেরুজ্যোতি বা অরোরা সৃষ্টি হয় কেন?

   

সূর্যের দেহে অনবরত ঘটে চলেছে নিউক্লিয় সংযোজন যা সৌরশক্তি উৎপাদনের উৎস। এই নিউক্লিয় সংযোজনের ফলে উৎপন্ন বিভিন্ন আধান যুক্ত কণা সৌর বিকিরণ এর ফলে চতুর্দীকে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এই বিকিরণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় সৌর ঝড়ের সময়। কিন্তু ঐ বিকিরণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সামগ্রিক ভাবে প্রবেশ করতে পারে না।

কারণ, আমাদের পৃথিবী একটি সুবিশাল চুম্বক। ভূ চৌম্বক বলরেখা গুলো সূর্য থেকে আসা ঐ ক্ষতিকর চার্জিত কণাগুলোকে সরাসরি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। কিন্তু এর মধ্যে কিছু চার্জিত কণা পৃথিবীর ভূ চৌম্বক বলরেখাগুলোকে অনুসরণ করে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে প্রবেশ করে এবং ঐ অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় পরমাণুকে উত্তেজিত করে। সূর্য থেকে আসা চার্জিত কণা গুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের পরমাণু গুলোকে আঘাত করলে পরমাণুর বহিঃস্তরের ইলেকট্রন গুলো অতিরিক্ত শক্তি সংগ্রহ করে এবং উত্তেজিত হয়ে উচ্চ শক্তিস্তরে উন্নিত হয়। এরপর ঐ উত্তেজিত ইলেকট্রন গুলো যখন শক্তি বিকিরণের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে থাকে তখন বিকীর্ণ শক্তি থেকে বিভিন্ন বর্ণের আলোকছটা সৃষ্টি হয়। একেই আমরা মেরুজ্যোতি বলে থাকি।

এই মেরুজ্যোতির বিভিন্ন রঙের জন্য দায়ী বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের পরমাণু। অক্সিজেন সৃষ্টি করে সবুজাভ হলুদ অরোরা এবং নাইট্রোজেন সৃষ্টি করে নীল ও লালাভ রঙের অরোরা। সাধারণত অরোরা সৃষ্টি হয় পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৯০ থেকে ১৩০ কিমি উপরে। অরোরার উজ্জ্বলতা নির্ভর করে চার্জিত সৌর কণার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করার তীব্রতার উপর। তাই তীব্র সৌর ঝড়ের পরে মেরুজ্যোতি সুন্দর দেখা যায় মেরু অঞ্চলের মেঘমুক্ত আকাশে এমনকি মেরু থেকে অনেক দূরের কোনও স্থান থেকে।