ভাটপাড়ার রাজনৈতিক মঞ্চে এক অভিনব দৃশ্য দেখা গেল। মঙ্গলবার মুন্সী পেনচাঁদ ভবনে তৃণমূল (TMC) সাংসদ পার্থ ভৌমিকের ‘জনতার দরবার’-এর অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে তৃণমূলেরই এক কর্মী সাংসদকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন। ওই কর্মীর মন্তব্যে স্পষ্ট, ভাটপাড়া-কাকিনাড়া অঞ্চলে তৃণমূলের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
কী ঘটেছিল সেই দিন?
অনুষ্ঠানে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন পার্থ ভৌমিক। সেই সময় এক দলীয় কর্মী সরাসরি বলেন, “ভাটপাড়া বিধানসভা এলাকায় গতবার ১৭,০০০ ভোটে হেরেছিলাম। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই হার ৩৫,০০০-এ পৌঁছাবে। কারণ, কাকিনাড়া ও ভাটপাড়ার জুটমিল শ্রমিকদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এই অসন্তোষ সামাল দিতে না পারলে আমাদের এই দুরবস্থা হবেই।”
তৃণমূলের অস্বস্তি
কর্মীর এহেন মন্তব্যের ভিডিও মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। দলীয় কর্মীর মুখে এমন বিস্ফোরক মন্তব্যে তৃণমূল শিবিরে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পার্থ ভৌমিক শান্তভাবে কর্মীর কথা শোনেন। কিন্তু এ নিয়ে দলীয় নেতারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
দলীয় নেতাদের সাফাই
ভাটপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবজ্যোতি ঘোষ পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “জনতার দরবারের মূল উদ্দেশ্যই মানুষের ক্ষোভ ও অভিযোগ শোনা। মানুষ প্রশ্ন তুলবে, সমালোচনা করবে, এটাই তো গণতন্ত্র। সাংসদ সেজন্যই এখানে এসেছেন। তবে এর বেশি কিছু পড়তে যাওয়া ভুল হবে।”
বিজেপির কটাক্ষ
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং ক্ষোভ নিয়ে বিজেপি কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। বিজেপির মুখপাত্র আবিষ্কার ভট্টাচার্য বলেন, “এটা নতুন কিছু নয়। মানুষ অনেক দিন ধরেই বলছে তৃণমূলের পতন নিশ্চিত। দলের নিজস্ব কর্মীরাই যখন এটা প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন, তখন বোঝা যায় দলের ভিত কতটা দুর্বল।”
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে প্রশ্ন
কাকিনাড়া ও ভাটপাড়ার জুটমিলগুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে বহু দিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। শ্রমিকরা বেতন, কর্মসংস্থান এবং মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। কর্মীদের দাবি, তৃণমূল নেতৃত্ব এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে ব্যর্থ। এই অঞ্চলের জুটমিলগুলির অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করা হচ্ছে।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা
ভাটপাড়ার ভোটের ফলাফল তৃণমূলের কাছে বরাবরই একটি চ্যালেঞ্জ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে বিজেপি জয়লাভ করে। এরপর থেকেই তৃণমূল চেষ্টা করছে এখানে তাদের প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি তৃণমূলের এই চেষ্টায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এবং স্থানীয় স্তরের সমস্যা যদি দলীয় নেতৃত্ব সমাধান করতে না পারে, তাহলে ২০২৬ সালের নির্বাচনে তৃণমূলকে আরও বড় ধাক্কা খেতে হতে পারে। এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “ভাটপাড়া-কাকিনাড়া অঞ্চলে তৃণমূলের জেতার সম্ভাবনা নির্ভর করছে স্থানীয় সমস্যাগুলির সমাধানের উপর। এই অঞ্চলের ভোটারদের মধ্যে যে অসন্তোষ রয়েছে, তা দ্রুত সমাধান না করা গেলে তৃণমূলের হার অবশ্যম্ভাবী।”
তৃণমূলের ভবিষ্যৎ কী?
এই ঘটনার পর ভাটপাড়া এলাকায় তৃণমূল কেমনভাবে জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনতার দরবারে এক কর্মীর এমন মন্তব্য দলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তৃণমূল নেতৃত্ব যদি এই সংকট সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাটপাড়া তৃণমূলের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এই ঘটনাটি শুধু ভাটপাড়ার তৃণমূলের নয়, বরং রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থান নিয়েও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।