নেতাজি ইস্যুতে কুণাল ঘোষকে কড়া জবাব ইতিহাসবিদের

কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে বাংলায় আলাদা দল গড়ে সংসদীয় রাজনীতিতে একমাত্র…

Kunal Ghosh’s Controversial Comparison of Netaji Subhas Chandra Bose

কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে বাংলায় আলাদা দল গড়ে সংসদীয় রাজনীতিতে একমাত্র সফল ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুভাষচন্দ্র বসু বা প্রণব মুখোপাধ্যায় আলাদা দল করেও সফল হতে পারেননি।”

এই মন্তব্যের পরই ইতিহাসবিদ চন্দ্রচূর ঘোষ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। চন্দ্রচূর ঘোষ সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন ও সংগ্রামের অন্যতম বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, “সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করাটা হাস্যকর। নেতাজি দেশ ছাড়ার আগে শেষবারের মতো নির্বাচন করেছিলেন ১৯৩৭ সালে। ১৯৩৯ সালে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরি করেন। এরপর স্বাধীনতার আগে আর কোনো সংসদীয় নির্বাচন হয়নি, তাই সুভাষচন্দ্র বসু সংসদীয় রাজনীতিতে সফল হলেন কি না, সেই আলোচনা অর্থহীন।”

   

চন্দ্রচূর আরও বলেন, “১৯৪৫-৪৬ সালে যখন নির্বাচন হয়, তখন সুভাষচন্দ্র ছিলেন জাপানে। তিনি সরাসরি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তাই ফরওয়ার্ড ব্লকের সাফল্য-ব্যর্থতার বিষয়টি সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। যদি নেতৃত্বহীন ফরওয়ার্ড ব্লকের কথা বলেন, তাহলে তুলনাটা হওয়া উচিত মমতা-বিহীন তৃণমূলের সঙ্গে। তৃণমূল কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া একদিনও টিকে থাকতে পারবে?”

চন্দ্রচূর স্পষ্ট করেন, কলকাতা কর্পোরেশনের ১৯৪০ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে কিছু লাভ নেই। কারণ সেই সময় কংগ্রেসের কোনো উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না। তাছাড়া নেতাজির সময়ের ফরওয়ার্ড ব্লক এবং স্বাধীনতার পরে গঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা।

কুণাল ঘোষের বক্তব্যে বিতর্ক
কুণাল ঘোষের মন্তব্য যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত, তা মনে করছেন অনেকেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করতে গিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তুলনা করায় তৃণমূলের বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান রাজনীতি একসঙ্গে তুলনা করা স্রেফ অপমানজনক। কুণাল ঘোষ ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাচ্ছেন।”

তৃণমূলের সাফাই
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অবশ্য কুণাল ঘোষের মন্তব্যকে সমর্থন করা হয়েছে। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “কুণালবাবু নেতাজির অবমাননা করেননি। তিনি কেবল বলতে চেয়েছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদীয় রাজনীতিতে এক বড় সাফল্য অর্জন করেছেন। বাংলায় কংগ্রেস ছেড়ে আলাদা দল গড়ে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য পাওয়া একটি বিরল উদাহরণ।”

ইতিহাসের প্রসঙ্গ
সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক জীবন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে তুলেছিলেন। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক রাজনীতিতে সফল হয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটের মধ্যে এই তুলনা করার কোনো ভিত্তি নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতামত
ইতিহাসবিদদের মতে, কুণাল ঘোষের মন্তব্য রাজনৈতিক প্রচারের অংশ। সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক জীবন কেবল বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি একটি বৃহত্তর স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে একজন শক্তিশালী আঞ্চলিক নেতা।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করে কুণাল ঘোষ এক রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তবে ইতিহাস এবং বাস্তব প্রেক্ষাপটের নিরিখে এই ধরনের মন্তব্য কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।