পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালিদের সতর্কবার্তা তথাগত রায়ের

সম্প্রতি ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তথাগত রায় একটি সতর্কবার্তা জারি করেছেন, যা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালিদের (Warning to Hindu Bengali) উদ্দেশ্যে। তিনি তাঁর বক্তব্যে…

Tathagata Roy

সম্প্রতি ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তথাগত রায় একটি সতর্কবার্তা জারি করেছেন, যা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালিদের (Warning to Hindu Bengali) উদ্দেশ্যে। তিনি তাঁর বক্তব্যে হিন্দু সমাজের বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই বক্তব্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন এবং পশ্চিমবঙ্গে তার সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টি।

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বাস্তবতা
তথাগত রায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে। জিজিয়া কর আরোপ করার প্রস্তাব এবং হিন্দু ছাত্রদের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের শিকার হওয়া, বাংলাদেশে হিন্দুদের অসহায় অবস্থার উদাহরণ। ৫৭টি উগ্র মুসলিম সংগঠন যেভাবে বাংলাদেশকে প্রভাবিত করছে, তাতে হিন্দুদের উপর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক নিপীড়ন আরও তীব্র হচ্ছে।

   

স্কুল, কলেজ এবং কর্মক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রতি যে অপমানজনক আচরণ করা হচ্ছে, তাতে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন দেশ ছেড়ে চলে যেতে। এর পাশাপাশি, খুন, ধর্ষণ, এবং সম্পত্তি লুঠের মতো ঘটনাগুলি বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের জন্য সতর্কবার্তা
তথাগত রায় পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সমাজকে সতর্ক করেছেন এই বলে যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গেও সৃষ্টি হতে পারে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, হিন্দু সমাজ কি তাদের নিরাপত্তা, সংস্কৃতি এবং অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সক্রিয় হবে, নাকি দৈনন্দিন জীবনের ছোটো সুখে মগ্ন থেকে এই চ্যালেঞ্জকে উপেক্ষা করবে।

বাংলাদেশ থেকে অব্যাহত হিন্দু শরণার্থীর আগমন এবং সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় এই সতর্কবার্তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। রায় মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের যদি নিজেদের অবস্থান দৃঢ় না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য আরও বড় সংকট অপেক্ষা করছে।

সমাজ ও রাজনীতির ভূমিকা
তথাগত রায়ের বক্তব্যে সমাজ ও রাজনীতির ভূমিকার প্রতি তীব্র সমালোচনা দেখা যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন, হিন্দুদের একাংশ শুধুমাত্র “সম্প্রীতি” এবং “বিশ্বপ্রেমে” মগ্ন থাকায় ভবিষ্যতের সংকটকে উপেক্ষা করছে। এই বিষয়ে তিনি সমাজের প্রত্যেক স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তারা হিন্দুদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশেষত, তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহ্বান করেছেন, তারা যেন এই বিষয়ে দ্রুত এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেন।

সাধারণ মানুষের ভূমিকা
তথাগত রায় সাধারণ হিন্দু বাঙালিদের কাছে সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন হওয়া এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সমাজের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রক্ষা করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তথাগত রায়ের বক্তব্য একটি বিতর্কিত বিষয় হলেও এটি সমাজের একটি বড় অংশের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অবস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা টেনে তিনি যে সতর্কবার্তা দিয়েছেন, তা উপেক্ষা করা কঠিন।

পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সমাজ কি এই সতর্কবার্তার প্রতি সাড়া দেবে, নাকি প্রচলিত জীবনযাত্রায় মগ্ন থাকবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ভবিষ্যতের জন্য এই প্রশ্নের উত্তরই স্থির করবে হিন্দু সমাজের অবস্থান এবং তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।