মুজিব হত্যা ষড়যন্ত্র ২: পার্টি জমতেই ভারতীয় সাংবাদিকের সামনে ক্ষমতা কাড়ার দাবি সেনাকর্তা ডালিমের!

কেন মুজিবুর রহমান খুন? Kolkata 24×7 প্রকাশ করছে সিরিজ। এই সিরিজের মূল লক্ষ্য, মুজিব হত্যার নেপথ্য অংশগুলি দেখা। (The story behind the assassination of Sheikh…

The story behind the assassination of Sheikh Mujibur Rahman

কেন মুজিবুর রহমান খুন? Kolkata 24×7 প্রকাশ করছে সিরিজ। এই সিরিজের মূল লক্ষ্য, মুজিব হত্যার নেপথ্য অংশগুলি দেখা। (The story behind the assassination of Sheikh Mujibur Rahman)

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: সদ্য তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ। চার পাশে চরম বিশৃঙ্খলা। আইন কানুনের তোয়াক্কা কেউ করে না। সবাই একবাক্যে “আমরা সবাই রাজা…” মেনে চলছেন! জনজীবনে প্রবল অসন্তোষ। অভিযোগ উঠছিল শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভূবনজোড়া সুখ্যাতির আড়ালে স্বজন-পোষণ করছেন। আরও অভিযোগ আসছিল বিপুল আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়ছিলেন শেখ সাহেব ঘনিষ্টরা। ক্ষমতা আসলে কাঁটার মুকুট। বাংলাদেশে লাখ লাখ জনতা শেখ সাহেবের নামে জীবন দিতে পারে। সেই জনতার মধ্যে তার জনপ্রিয়তার সূচক নামছিল। বঙ্গোপসাগরের তীরে থাকা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতা দখলের কলকাঠি নাড়ছিলেন মুজিব ঘনিষ্ঠরা।

   

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের শীতল বিকেলে শেষ রোদ যখন ঢাকা নগরের উপর লাল আভা ছড়িয়ে দিগন্তে মিলিয়ে গেল তার পরের পরিস্থিতি কীরকম ? ততক্ষণে তৈরি হয়ে গেছে বাংলা ভাষার দেশ-বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রগুলির শিরোমাম যুদ্ধ চলছিল। প্রভাতী দৈনিকগুলির জন্য প্রথম পাতা তৈরি হচ্ছে। সরকারিভাবে পাকিস্তানের সেনা ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও কয়েকটি এলাকায় আরও কয়েকদিন যুদ্ধ চলেছিল!

ঢাকার চারপাশে হঠাৎ হঠাৎ গুলি চলছে। আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সেনাদের ঘনিষ্ঠরা চোরাগোপ্তা হামলায় মত্ত। তাদের রুখছিলেন যুদ্ধ জয়ী মুক্তিযোদ্ধা সশস্ত্র গেরিলারা। আগ্মেয়াস্ত্র সহজলভ্য। গুলি-বন্দুকের ছড়াছড়ি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনা সাময়িক সময়ের জন্য মোতায়েন ছিল। বিষয়টি সদ্য গঠিত বাংলাদেশের কিছু সেনাকর্তা মেনে নিতে পারেননি। এটি ছিল আমলাতান্ত্রিক কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের একটি পর্ব। ক্রমে সময় যত এগিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৎকালীন সময়ে ভারতীয় সেনার সেই অবস্থান নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক চলেছে।

The story behind the assassination of Sheikh Mujibur Rahman

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করেছিল পাকিস্তান সরকার। বাংলাদেশ তৈরির পর প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। তিনি ঢাকায় ফিরে আসার পর তৈরি হয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সমস্যা। ক্রমশ আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের থেকে মুজিবুর রহমানের দূরত্ব বাড়ছিল। তেমনই একজন তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ছিলেন কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী। অত্যন্ত মুজিব ঘনিষ্ঠ তাজউদ্দিন তার নেতার জন্য একবাক্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। নিজেকে গুটিয়ে নেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে বিশিষ্ট সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। তাঁর লেখা ‘মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র’ বইয়ের কিছু অংশ- ‘রাতে জাহানার ইসলামের এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে এক পার্টিতে গেলাম আমন্ত্রিত হয়ে। সেখানে দেখা হল বেশ কিছু আর্মি অফিসারের সঙ্গে। এদের মধ্যে মেজর ডালিমও ছিলেন। আর ছিলেন বাংলাদেশ তথ্য দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল এম. আর. আখতার, বিবিসি সংবাদদাতা শ্যামল লোধ প্রমুখ। মুজিব সরকারের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ উঠল। সেখানে মেজর ডালিম স্পষ্ট বলেন মুজিবের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে একমাত্র উপায় সামরিক শাসন কায়েম করা।’

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত লিখেছেন, ”ঢাকায় তখন ভারতবিরোধী হাওয়া চলছে প্রবলভাবে। আমি বেশি মুখ খুললাম না। বস্তুত আখতারই আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে চুপ করে থাকতে পরামর্শ দেন। আলোচনার ধারাটাও তিনি ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। হোটেলে ফেরার পথে আখতার আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিছু বুঝতে পারলেন আজ?শুধু বললাম- কী আর বুঝবার আছে।…”

সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্তর লেখা ‘মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র’ বইটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।  ১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থানে মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুন ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন পূর্বতন সেনা অফিসার শরিফুল হক ডালিম। উল্লেখ্য, মুজিব হত্যার পর বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলকারী সেনা কর্তা জিয়াউর রহমানের বিশেষ ঘনিষ্ঠ ডালিম। তাকে কূটনীতিক তকমা দিয়ে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়। তবে বাংলাদেশে মুজিব হত্যার তদন্ত শুরু হতেই আত্মগোপনে চলে যায় ডালিম। গত বছর (২০২৪) ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার টানা দেড় দশকের শাসন ভেঙে পড়ে। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ডালিমের আচমকা আত্মপ্রকাশ!

সুখরঞ্জন দাশগুপ্তর সামনেই মুজিবুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে চিৎকার করেছিল সেনা অফিসার ডালিম। সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা কিছু অফিসারের দাবি ছিল মুজিবুর রহমান গণতন্ত্র ধংস করে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। মুজিবুর রহমানের সেই একদলীয় শাসন পদ্ধতি বাংলাদেশে বারবার রাজনৈতিক বিতর্ক তুলেছে। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) নামে একটি দল গঠন করেছিলেন। বাকি সব দলগুলির রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছিল। এই নির্দেশ জারির পরই তাকে হত্যা করা হয়।

গত পর্ব: মুজিব হত্যা ষড়যন্ত্র -১ : ফিদেল কাস্ত্রোর চিৎকার কমরেড মুজিব আপনি জলদি খুন হতে যাচ্ছেন !