“লাল হলুদ জার্সি…” বিস্ফোরক ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার

ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) প্রাক্তন তারকা (Former Footballer) অর্ণব মণ্ডল (Arnab Mondal) আজও লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে বিশেষ জায়গা ধরে রেখেছেন। একসময়ে যে ডিফেন্ডার দলের রক্ষণভাগকে শক্তিশালী…

East Bengal

ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) প্রাক্তন তারকা (Former Footballer) অর্ণব মণ্ডল (Arnab Mondal) আজও লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে বিশেষ জায়গা ধরে রেখেছেন। একসময়ে যে ডিফেন্ডার দলের রক্ষণভাগকে শক্তিশালী করে তুলতেন, তার বর্ণনা আজও ফুটবল প্রেমীদের মুখে শোনা যায়। তবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) বর্তমানে ইস্টবেঙ্গলের অবস্থান দেখে মুষড়ে পড়ছেন তিনি। প্রথমসারির এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্লাবের দুঃসময়ে তার কণ্ঠে সুনির্দিষ্ট ক্ষোভ এবং হতাশা ফুটে উঠেছে। এক সময় যে ইস্টবেঙ্গল মাঠে মাঠে জয়লাভ করত, তার অবস্থা এখন একেবারে তলানিতে। আর এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে অর্ণব মণ্ডল তার কিছু মূল্যবান মতামত তুলে ধরেছেন।

চুক্তি শেষে সৌদির আল নাসের ছেড়ে পুরনো ক্লাবে পর্তুগিজ তারকা?

   

গত কয়েক বছরে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স যে ক্রমাগত অধঃপতিত হয়েছে, তা অর্ণব মণ্ডলের বক্তব্যে স্পষ্ট। তার মতে, এই পতনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, খেলোয়াড় নির্বাচন, ধারাবাহিক ভুল সিদ্ধান্ত এবং কোচিং ম্যানেজমেন্টের গন্ডগোলের কারণে দলের অবস্থা এমন হয়েছে। তিনি বলেন, “একবার-দু’বার ব্যর্থ হলে সেটা সহ্য করা যায়, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এমন পারফরম্যান্স কেন হবে? কোচের ভুল সিদ্ধান্ত, প্লেয়ারদের ভুল, সব মিলিয়ে মিস ম্যানেজমেন্টের জন্যই তো এই অবস্থা।”

ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক পতন সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “কুয়াদ্রাতের সময়ে সিভেরিও আর বোরহা চলে যাওয়ার পর যে দু’জন খেলোয়াড়কে আনা হয়েছিল, তাদের উপরে বিশ্বাস রেখেছিলেন কে? দল সাত ম্যাচে একটা পয়েন্টও পায়নি। সেই কোচই তো এই দলকে শেষ করে দিয়েছে।” তার মতে, এই দলের কাছ থেকে আর কিছু প্রত্যাশিত নয়। “দু-একটা ম্যাচ জিতলেই সেটাই চমক হবে। সমর্থকরা এখন আর কিছু আশা করেন না। পাঁচ-সাত বছর আগে হলে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া অনেক ভিন্ন হত,” তিনি মন্তব্য করেন।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সূর্যকুমারের নেতৃত্বে ভারতের সম্ভাব্য একাদশ

অর্ণব মণ্ডলের মতে, সমর্থকরা যে এখন আর কোনও প্রতিবাদ করছে না, সেটা ক্লাবের অস্থিরতা এবং দলের দুর্বলতার পরিচায়ক। “এখন সবাই কমফোর্ট জোনে ঢুকে পড়েছে। দল হারলেও কেউ কিছু বলছে না।” তাঁর মতে, ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। “লাল-হলুদ জার্সির সংস্কৃতি জানলে খেলোয়াড়রা সঠিকভাবে মাঠে নামতে পারে। কিন্তু সেটা যদি না জানে, তবে কীভাবে ভালো খেলবে?” প্রশ্ন করেন তিনি।

তবে বর্তমান ক্লাবের খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশেষ করে বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে অর্ণবের কিছু স্পষ্ট মতামত রয়েছে। বিশেষত, ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরের সম্পর্কে তিনি বলেন, “হিজাজির শিশুসুলভ ভুলের কারণে ইস্টবেঙ্গল মুম্বাইয়ের কাছে হেরে যায়। খেলার মাঠে ভুল হতেই পারে, কিন্তু একই ভুল বারবার কেন করবে? বিদেশি ফুটবলারদের তেমন কোনো গুণই দেখা যাচ্ছে না। হিজাজি ও হেক্টর খুব মন্থর। তাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ঘরোয়া ফুটবলারদের থেকে তাদের মান খারাপ। তবুও তাদের বহন করতে হচ্ছে।”

ডার্বিতে বাগানকে চোখ রাঙাবে ইস্টবেঙ্গল! নাম প্রকাশ নতুন বিদেশি ফুটবলারের

অর্ণব আরো স্পষ্টভাবে বলেন, “মর্গ্যান জমানায় এই পারফরম্যান্স থাকলে হিজাজি বা হেক্টরের জায়গা প্রথম একাদশে হত না। তাদের পারফরম্যান্স তো অতি নিম্নস্তরের ছিল।” তিনি মনে করেন, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ এবং কর্মকর্তাদের আরো মনোযোগ দিতে হবে দলের উন্নতির দিকে। একদম শুরু থেকে দলের মধ্যে জেতার মানসিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। “অতীতের ইস্টবেঙ্গলকে আবার দেখতে চাই,” বলেন অর্ণব।

তবে একদম অন্ধকারের মধ্যেও কিছুটা আলো দেখছেন অর্ণব। তিনি জানান, “এখনো কয়েকটা ম্যাচ বাকি। পয়েন্ট হারালে চলবে না। দলের মধ্যে জেতার স্পৃহা ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি তা হয়, তাহলে এই দল আবার পুরনো ইস্টবেঙ্গল হয়ে উঠতে পারে।”

অর্ণব মণ্ডলের এই বক্তব্যে ফুটবল প্রেমীরা মনে করতে বাধ্য হচ্ছেন যে, ইস্টবেঙ্গলের জন্য এতদিন যে গৌরব ছিল, তা শুধুই স্মৃতি হয়ে গেছে কি না। দলের মধ্যে আজকাল যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার দায় শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের বা কোচের নয়, ক্লাব ম্যানেজমেন্টেরও। যদি সঠিক পরিকল্পনা এবং মনোভাব নিয়ে কাজ করা যায়, তাহলে এই ক্লাব পুনরায় সেই পুরনো গৌরবের দিকে ফিরে যেতে পারবে।

কোভিড-ই কাল করেছে কিং কোহলির রান খরায়!

অর্ণবের মন্তব্যে একটি বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায়, যেখানে তিনি বলছেন, “আজকের হিজাজির মতো যদি আগে কেউ ভুল করত, তবে হয়তো সমর্থকরা এমন সহ্য করতেন না। তাঁরা প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। সমর্থকরা আর তেমন কিছু বলছে না, কারণ তারা জানে যে এই দলের কাছ থেকে কিছু আশা করা যায় না।”

অর্ণব মণ্ডলের অন্তর্নিহিত বেদনা এবং তার কথায় যে ক্লাবের জন্য গভীর মনোযোগ এবং সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠেছে, সেটা স্পষ্ট। যখন একজন প্রাক্তন তারকা, যার হৃদয়ে ক্লাবের প্রতি আস্থা এবং ভালোবাসা রয়েছে, সেই তারকা এমন কথা বলেন, তখন সেটা শুধু সমর্থকদের জন্যই নয়, ক্লাব কর্তৃপক্ষের জন্যও এক বড় ধরনের সংকেত।