নতুন বছরে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) মুম্বই সিটি এফসির (Mumbai City FC) বিপক্ষে অভিযান শুরু করে ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। যদিও নিজেদের ঘরের মাঠেই বছরের শুরুটা খুব একটা সুখর ছিল না লাল-হলুদ শিবিরের জন্য। ম্যাচের প্রধমার্ধে ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়েও, দ্বিতীয়ার্ধের শেষ কয়েক মিনিট বাকি থাকতে দুরন্ত কামব্যাক করেছিল অস্কার ব্রুজোর ছাত্ররা। কিন্তু পুরনো শামুকেই ফের পা কাটল মশাল ব্রিগেডের। অর্থাৎ রক্ষনেরভুলেই শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে তিন পয়েন্ট হাতছাড়া করে আনোয়ার-দিমিত্রিয়সরা। যার জন্য বছর শুরুতেই প্রথম ম্যাচ হারায় হতাশ সমর্থকরাও। কিন্তু ম্যাচ হারলেও পারফরম্যান্সের নিরিখে আলোচনায় নাম উঠে এল লাল-হলুদ ফুটবলারের (East Bengal FC Footballer)। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের পিভি বিষ্ণু (PV Vihsnu)।
কলকাতা ডার্বিতে বেঞ্চে থাকা কামিংস হতে পারেন মোহনবাগানের হাতিয়ার
ইস্টবেঙ্গল এফসির মিডফিল্ডার পিভি বিষ্ণু, যিনি গত বছররর শেষ মাসে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। সেই মাসে বিষ্ণু লাল-হলুদ জার্সিতে পাঁচ ম্যাচে খেলতে নামেন। যার মধ্যে ৪ ম্যাচেই তিনি প্রথম একাদশে ছিলেন। তার খেলার ধরন এবং দক্ষতা, বিশেষ করে গোল এবং অ্যাসিস্টের মাধ্যমে, তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করেছে।
A dominant display in December earns Vishnu the #ISL Emerging Player of the Month award! 🌟#JoyEastBengal #EBFCMCFC pic.twitter.com/lbkDK1DTHq
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) January 6, 2025
পিভি বিষ্ণু ২৩ বছর বয়সী একজন তরুণ খেলোয়াড়। যিনি এর আগে কখনো এই ধরনের বড় পুরস্কার লাভ করেননি। ডিসেম্বর মাসে, তিনি একাধিক ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ইস্টবেঙ্গলকে দলগতভাবে উজ্জীবিত করতে সাহায্য করেন। বিশেষভাবে পাঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে তার দারুণ পারফরম্যান্স ছিল স্মরণীয়, যেখানে তিনি প্রথমার্ধে দুই গোল পিছিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গলকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেন। এই ম্যাচে বিষ্ণু একটি গোল করেন এবং একটি গোলের জন্য অ্যাসিস্ট করেন, যা দলের জয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আনোয়ারের চোট নিয়ে মুখ খুললেন দেবব্রত সরকার
আরেকটি স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল মেরিনা অ্যারেনায়, যেখানে ইস্টবেঙ্গল ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয় এবং সেখানে বিষ্ণু একটি দুর্দান্ত ফিনিশের মাধ্যমে গোল করেন। সাউল ক্রেসপোর ক্রস থেকে তার কাছাকাছি শট ছিল যথেষ্ট নিখুঁত এবং সঠিক সময় এবং জায়গায় বলটি তিনি জালে পাঠান। এটি তার ফর্মের চমৎকার উদাহরণ এবং প্রমাণ যে বিষ্ণু শুধু আক্রমণাত্মক দিকেই নয়, রক্ষণের দিকেও অনেকটা দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
ডিসেম্বর মাসে বিষ্ণুর পরিসংখ্যানও অত্যন্ত প্রশংসনীয় ছিল। তিনি ৭৭টি সফল পাস সম্পন্ন করেন, যার সাফল্যের হার ছিল ৭১.৪৩%। এছাড়াও, ১৭টি ড্রিবলের মধ্যে ৪১.১৮% ছিল সফল, যা তার কৌশলগত দক্ষতা এবং বল কন্ট্রোলের উপর প্রমাণ দেয়। তার এসব পারফরম্যান্স দলকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল এবং ইস্টবেঙ্গলকে মোট ১৫ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট অর্জন করতে সহায়তা করে। এটি অস্কার ব্রুজোর অধীনে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর এক বড় দিক ছিল।
ইস্টবেঙ্গলকে পরাজিত করে ‘বিস্ফোরক’ প্রবীর দাস
এছাড়া, বিষ্ণু মাত্র ২৩ বছর বয়সী হওয়া সত্ত্বেও, তার খেলার ধরন এবং প্রতিভা তাকে এই মর্যাদা অর্জনে সহায়তা করেছে। তার বয়সের তুলনায় সে যেভাবে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে, তা অনেককে মুগ্ধ করেছে। পিভি বিষ্ণু যে খেলোয়াড় হতে চলেছে, সে সম্পর্কে সবার মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ এবং আশা তৈরি হয়েছে। দলগতভাবে ইস্টবেঙ্গল এফসি একে অপরকে সাহায্য করে চললেও, বিষ্ণুর পারফরম্যান্সে তার নিজস্ব আলাদা আবেদন রয়েছে।
বিষ্ণুর এই উন্নতি শুধু দলের জন্য নয়, বরং পুরো আইএসএলে তার প্রতিভার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। তার খেলার কৌশল এবং গতি থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তিনি ভবিষ্যতে আরো বড় মঞ্চে তার দক্ষতা প্রদর্শন করবেন। তার এই ধরনের পারফরম্যান্সের জন্য অন্যান্য ক্লাবও তাকে নজরদারিতে রেখেছে এবং ভবিষ্যতে তাকে আরও বড় পর্যায়ে খেলতে দেখা যেতে পারে।
ওডিশা এফসিতে যোগদান করার কারণ জানালেন রাহুল কেপি
ইস্টবেঙ্গল এফসি এবং মুম্বাই সিটি এফসির মধ্যে একটি খেলার উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল। ইস্টবেঙ্গল প্রথমে দুই গোলে পিছিয়ে থাকলেও, তারা পরে দুর্দান্তভাবে সমতায় ফিরেছিল। কিন্তু শেষে, রক্ষণের একটি ভুলের কারণে ইস্টবেঙ্গলকে হারতে হয়। এই ম্যাচটি দেখায় যে, দলটি শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম, তবে ছোট ছোট ভুলগুলো তাদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
নতুন বছরের প্রথম ম্যাচে জয়ের পর, ইস্টবেঙ্গল এই মরসুমে আবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং তারা সেরা পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। যদিও তারা মুম্বাই সিটি এফসির বিরুদ্ধে কিছুটা দুর্বলতা দেখিয়েছে, তবে তাদের উত্থান এবং বিষ্ণুর মতো খেলোয়াড়দের পরিশ্রমকে দারুণভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। পিভি বিষ্ণুর এই প্রতিভা এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাকে শুধু ইস্টবেঙ্গল এফসির এক অনন্য খেলোয়াড়ই নয়, বরং পুরো আইএসএলের এক উজ্জ্বল তারকায় পরিণত করেছে।