বিশ্বজুড়ে HMPV সংক্রমণ বৃদ্ধি, ফের ফিরছে লকডাউন!

চিনে ফের বাড়ছে উদ্বেগ, কিন্তু ভারতে নতুন করে লকডাউনের শঙ্কা নিয়ে ভীতি ছড়ানোর কোনও কারণ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিনে আবারও ‘লকডাউন’ শব্দটি ট্রেন্ডিং হয়ে…

No Need to Panic, Says Central Government Over HMPV Concerns

চিনে ফের বাড়ছে উদ্বেগ, কিন্তু ভারতে নতুন করে লকডাউনের শঙ্কা নিয়ে ভীতি ছড়ানোর কোনও কারণ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিনে আবারও ‘লকডাউন’ শব্দটি ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে। বিশেষত HMPV (হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় এমন জল্পনা শুরু হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা স্পষ্ট করেছেন, HMPV নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। ভারত সরকার এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন।

HMPV (হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) ২০০১ সালে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। এটি এক ধরনের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে, যা সাধারণত ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, হালকা জ্বর ইত্যাদি উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই ভাইরাসটির শিকার হতে পারে যে কোনো বয়সের মানুষ, তবে বাচ্চা, বৃদ্ধ এবং শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতা বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

   

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই HMPV-এর উপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করছে, কিন্তু এটি কখনও মারাত্মক মহামারী হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। HMPV সাধারণত স্বল্পমেয়াদী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে এবং এটি খুবই সাধারণ। ফলে, সাধারণত এই ভাইরাসটির কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বেশ সহজেই সম্ভব।

চিনের মধ্যে নতুন করে HMPV এর প্রাদুর্ভাব ঘটায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় আগের করোনাকালের স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে। ২০১৯ সালে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল, তখন বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আবার কি দেশে লকডাউন হতে পারে?

তবে এই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, HMPV কোনও নতুন ভাইরাস নয় এবং এর কারণে লকডাউন বা দেশের পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা HMPV-কে একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটি মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।” তিনি আরও বলেন, “এই ভাইরাস সম্পর্কে সারা পৃথিবীই অবগত, এবং এটি সাম্প্রতিককালে কোনো বড় মহামারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”

ভারত সরকার বর্তমানে দেশের সমস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে HMPV-এর ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি নিয়মিতভাবে ভাইরাসটির উপর গবেষণা চালাচ্ছে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

নাড্ডা আরও জানান, “সরকার চিনের পরিস্থিতির উপরও কড়া নজর রাখছে। পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।”

গত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন রকমের টিপ্পনি চলছে, যেখানে অনেকে করোনা মহামারী বা লকডাউনের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে যে, এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ২০২০ সালের করোনা ভাইরাসের মতো নয়, যে কারণে সমগ্র দেশজুড়ে লকডাউনের প্রয়োজন হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ভারত সরকার দুটি পক্ষই স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, এটি একটি সাধারণ ভাইরাস এবং এর মোকাবিলা করার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন নেই। তবে যেহেতু শীতের মৌসুম শুরু হচ্ছে এবং ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, তাই বিশেষভাবে বৃদ্ধ এবং শিশুরা যেন এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

HMPV নিয়ে বর্তমানে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটি একটি পরিচিত ভাইরাস, যার জন্য অতিরিক্ত উদ্বেগের কোনও প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রীয় সরকার এবং ICMR নিয়মিতভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। চিনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হলেও, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আপাতত আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।