জামশেদপুর ম্যাচের হতাশা ভুলে ফের জয়ের রাস্তায় ফিরল কেরালা ব্লাস্টার্স (Kerala Blasters)। শনিবার সন্ধ্যায় নিজেদের পরবর্তী অ্যাওয়ে ম্যাচে দক্ষিণ ভারতের এই ফুটবল ক্লাবের মুখোমুখি হয়েছিল পাঞ্জাব এফসি, যারা শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের এই ক্লাবটি ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে, ১-০ গোলে জয় ছিনিয়ে নেয়। এর ফলে তারা আইএসএলের পয়েন্ট টেবিলে কিছুটা উপরে উঠে আসে।
এই জয়ে কেরালা ব্লাস্টার্স ১৫টি ম্যাচ খেলে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে পৌঁছেছে। তারা পিছনে ফেলেছে আরেক শক্তিশালী দক্ষিণ ভারতীয় ক্লাব চেন্নাইয়িন এফসিকে, যারা বর্তমানে ১০ম স্থানে অবস্থান করছে। যদিও পাঞ্জাব এফসি ম্যাচের হোম দল ছিল, তবে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খেলা ছিল অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। একে অপরকে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে, দুই দলই জয়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে কেরালা ব্লাস্টার্সের জয় নিশ্চিত হয়।
ম্যাচের একমাত্র গোলের নায়ক নোয়া সাদাউ
কেরালা ব্লাস্টার্সের জয়ে একমাত্র গোলটি করেন মরোক্কান তারকা নোয়া সাদাউ। ম্যাচের প্রথমার্ধের শেষ লগ্নে পাঞ্জাব এফসির রক্ষণে প্রবেশ করেন সাদাউ, এবং পাঞ্জাবের ডিফেন্ডাররা তাকে পেনাল্টি বক্সে ফেলে দেন। এতে কেরালা ব্লাস্টার্স পেনাল্টি পায় এবং সাদাউ সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন। প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলের ব্যবধানে কেরালা ব্লাস্টার্স লিড নিতে সক্ষম হয়।
এই গোলটি ছিল কেরালা ব্লাস্টার্সের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পাঞ্জাব এফসি এর আগে অনেক আক্রমণ করে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সাদাউয়ের এই গোলের মাধ্যমে কেরালা ব্লাস্টার্স একমাত্র গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় এবং পুরো ম্যাচের রক্ষণ কৌশল পাল্টে ফেলে। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে পাঞ্জাব এফসি বেশ কিছু আক্রমণ চালায়, কেরালা ব্লাস্টার্স তাদের রক্ষণে দৃঢ় হয়ে উঠে এবং ম্যাচে কোনও গোল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ প্রতিহত করে।
দ্বিতীয়ার্ধে উত্তেজনা
দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই পাঞ্জাব এফসি চাপ বাড়াতে থাকে। আজমির সুলজিক এবং অন্যান্য পাঞ্জাব খেলোয়াড়রা একের পর এক আক্রমণ করে কেরালা ব্লাস্টার্সের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করেন। তবে কেরালার রক্ষণভাগে দারুণ দক্ষতা প্রদর্শন করেন হরমিপাম রুইভারা, যিনি একের পর এক পাঞ্জাবের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হন। রুইভারা পাঞ্জাবের আক্রমণগুলোকে প্রতিহত করতে খুবই সতর্ক এবং সুবিন্যস্ত ছিলেন, ফলে ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্স গোল হজম করতে বাধ্য হয়নি।
খেলোয়াড়দের নিষেধাজ্ঞা
ম্যাচের ৭৫ মিনিটে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন কেরালা ব্লাস্টার্সের দুই গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্ডার আইবানবা দোহলিং এবং মিলোস ড্রিনচিচ পাঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে একাধিক ফাউল করেন। এর ফলস্বরূপ, উভয় খেলোয়াড়কেই লাল কার্ড দেখানো হয় এবং তাদের মাঠ ছাড়তে হয়। এতে কেরালা ব্লাস্টার্সের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ তারা ৯ জনে খেলতে থাকে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও, দলের দক্ষতা এবং রক্ষণভাগের দৃঢ়তা কেরালাকে জয় এনে দেয়।
দ্বিতীয়ার্ধে পাঞ্জাব এফসি বেশ কিছু আক্রমণ করে, তবে কেরালার রক্ষণভাগ এবং গোলরক্ষক তাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ১-০ ব্যবধানে কেরালা ব্লাস্টার্সের জয়ে শেষ হয় এবং তারা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের নবম স্থানে উঠে আসে।
কেরালা ব্লাস্টার্সের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
এই জয়ের ফলে কেরালা ব্লাস্টার্সের দল আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে এবং তাদের পরবর্তী ম্যাচগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। দলটির কোচ এবং খেলোয়াড়রা আশা করছেন, তারা তাদের গতির এই ধারা বজায় রাখবে এবং আরও ম্যাচ জিতবে। দলের আক্রমণভাগের শানিত খেলোয়াড়দের মধ্যে সাদাউ, সুলতান আলি, এবং নওয়াজ উদ্দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ভবিষ্যতে তাদের ওপর আরও বেশি চাপ থাকবে।
এছাড়া, দলের রক্ষণভাগও বেশ দৃঢ় হয়েছে এবং তারা আগের ম্যাচগুলির তুলনায় অনেক উন্নতি করেছে। তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণগুলো প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী।
কেরালা ব্লাস্টার্সের এই জয় দলটির আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তারা পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান আরও শক্ত করেছে। যদিও তারা দুই গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্ডারকে হারিয়েছিল, তবে তাদের সংগ্রাম এবং দৃঢ়তা এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তারা জানে, সামনে আরও কঠিন ম্যাচ আসবে, তবে এই জয়ের মাধ্যমে তারা তাদের লক্ষ্য পূরণের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে।