অনুপ্রবেশ বিরোধী হলে এনআরসি চালু করুন, মমতাকে বার্তা গিরিরাজের

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ফের একবার বিতর্ক উসকে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং (Giriraj Singh)। পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গে তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন…

Giriraj Singh Urges Mamata Banerjee to Implement NRC

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ফের একবার বিতর্ক উসকে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং (Giriraj Singh)। পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গে তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন তিনি। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সত্যিই অনুপ্রবেশ বিরোধী হন, তাহলে তাঁকে অবিলম্বে এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) চালু করতে হবে। পাশাপাশি, সিএএ (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) কার্যকর করার দিকেও জোর দিলেন গিরিরাজ সিং।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “আজ দেশে যত বাংলাদেশি ধরা পড়ে, তাদের শেষ ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায় কলকাতা। দিদি, আপনার দলের লোকেরাই এদের জন্য আধার কার্ড তৈরি করে দেয়। এটা দেশের প্রতি দেশদ্রোহ। আপনি যদি সত্যিই অনুপ্রবেশের বিরোধী হন, তাহলে এনআরসি এবং সিএএ কার্যকর করুন।”

   

গিরিরাজ সিংয়ের এই মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

তৃণমূলের পাল্টা আক্রমণ
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ গিরিরাজ সিংয়ের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক কুৎসা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, “বাংলাদেশ সীমান্ত পাহারা দেয় কে? বিএসএফ। আর বিএসএফ কার অধীনে? বিজেপি সরকারের। তাহলে ত্রিপুরা এবং অসম থেকে এত বহিরাগত কীভাবে ধরা পড়ছে? এটা তো সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা।”

কুণাল ঘোষ আরও বলেন, “কেন্দ্রের বাহিনী যদি ঠিকমতো কাজ করত, তাহলে বাংলায় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটত না। এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে কালিমালিপ্ত করতে চায়। সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে বড় বড় কথা বলার আগে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই তাদের ব্যর্থতা ঢাকুক।”

সীমান্ত সুরক্ষার ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপি তরজা

বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল এবং বিজেপি একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। বিজেপি অভিযোগ করে, তৃণমূল সরকার ভোটব্যাংকের রাজনীতির জন্য বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা বিএসএফের। সেক্ষেত্রে এই অনুপ্রবেশ পুরোপুরি কেন্দ্রের ব্যর্থতা।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে থেকেই এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর দাবি, এই আইনগুলি সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি। অন্যদিকে, বিজেপি বারবার বলেছে, এনআরসি এবং সিএএ দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অপরিহার্য।

বিতর্ক বাড়ছে, সমাধান অমিল
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপির এই রাজনৈতিক তরজায় রাজ্যের সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা এবং পরিচয় নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে এই দোষারোপের রাজনীতির কারণে সমস্যার সমাধান আজও অধরা।

গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্যের পর আবারও এই ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, অনুপ্রবেশ সমস্যা সমাধানে কোনও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কি না, তা সময়ই বলবে।