২০২৪ (2024) সাল ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) জন্য এক অনন্য বছর ছিল। এই বছরে কিছু বড় বিতর্কের সৃষ্টি হয় যা ফুটবলপ্রেমীদের (Football Lovers) ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। যার মধ্যে রয়েছে মোহনবাগান (Mohun Bagan SG) থেকে ইস্টবেঙ্গলে (East Bengal FC) যাওয়া ফুটবলার আনোয়ার আলির (Anwar Ali) ট্রান্সফার ইস্যু, মহামেডান (Mohammedan SC) বনাম কেরালা ব্লাস্টার্স (Kerala Blaters)ম্যাচে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এবং ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন কোচ ইগর স্টিমাচের সঙ্গে ফেডারেশনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনা সহ একাধিক ঘটনা। চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২৪ সালের সেরা পাঁচটি বড় বিতর্কের (Top 5 controversies) মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা গুলি।
৫. ইগর স্টিমাচের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের
নতুন বছরের শুরুতে ডিভোর্সের পথে চাহাল ও ধনশ্রী? তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া
ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে ইগর স্টিমাচের চাকরি ২০২৪ সালের ১৭ জুন শেষ হয়। সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থা (AIFF) তাঁকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটির পেছনে কারণ ছিল ভারতের ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ এবং এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্যায়ে ভারতের হতাশাজনক পারফরম্যান্স। দলের খেলোয়াড়রা কোনো গোল করতে পারেনি এবং সব ম্যাচেই পরাজিত হয়েছিল।
স্টিমাচের সাথে এআইএফএফের সঙ্গে সম্পর্কও তলানিতে পৌঁছেছিল। যেখানে দলের সূচির ভুল ব্যবস্থাপনা, জাতীয় দলের জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন না দেওয়া এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে, স্টিমাচ তাঁর বরখাস্তের পর সাংবাদিক বৈঠকে র্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ক্যাল্যান চৌবের সমালোচনা করেন এবং বলেন যে ফেডারেশন সোশ্যাল মিডিয়া জনপ্রিয়তার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, ফুটবল উন্নয়নের প্রতি কম। স্টিমাচ তাঁর বরখাস্তের পর দুই বছরের বেতন হিসেবে ৪০০,০০০ ডলার দাবি করেন, তবে ফেডারেশনের সাথে তিক্ত আলোচনার পর একটি সমঝোতায় পৌঁছান।
৪. সুব্রত কাপের বয়স জালিয়াতি
কলকাতা ডার্বির আগে বাগান-শুভাশীষ চুক্তির নয়া তথ্য ফাঁস
২০২৪ সালের সুব্রত কাপেও একটি বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল যখন তিনটি দলকে বয়স সংক্রান্ত জালিয়াতির জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। নাজারেথ মডেল হাই স্কুল (আসাম), নেহরু পাবলিক স্কুল (বিহার), এবং উলতো সরকারী মডেল হাই স্কুল (মণিপুর) তাদের দলগুলিতে অতিরিক্ত বয়সী খেলোয়াড় খেলানোর জন্য নিষিদ্ধ হয়। এই তিনটি দলের মোট ১৯ জন খেলোয়াড় বয়স পরীক্ষায় ফেলেন এবং তাদের ম্যাচগুলি বাতিল করা হয়।
এই বিতর্কটি বিশেষভাবে যুব ফুটবলের মান এবং সততা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছিল, যদিও আশা করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৩. আনোয়ার আলি ট্রান্সফার বিতর্ক
লাল-হলুদ জার্সিতে খেলবেন সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের এই সদস্য!
মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে আনোয়ার আলি ট্রান্সফার নিয়ে এক বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। জুলাই মাসে, তিনি নিজের চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করেন এবং দিল্লি এফসিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর ইস্টবেঙ্গল তাঁর সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করে এবং এই ট্রান্সফার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
কিন্তু সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি (PSC) ঘোষণা করে যে, আনোয়ার আলিকে চার মাসের জন্য খেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল ও দিল্লি এফসিকে দুইটি ট্রান্সফার উইন্ডোতে নিষিদ্ধ করা হবে। এর পাশাপাশি, মোহনবাগানকে ১২.৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দিল্লি হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে এবং এআইএফএফকে পুনরায় বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বলে।
২. মহামেডান এসসি বনাম কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যাচে সমর্থকদের সংঘর্ষ
নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ড্র করে এই বিষয়ে ভাবাচ্ছে চেরনিশভকে
কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে মহামেডান স্পোর্টিং এবং কেরালা ব্লাস্টার্সের মধ্যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ চলছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মহামেডান সমর্থকরা এক পেনাল্টি অস্বীকার হওয়ার পর রেগে গিয়ে মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। সমর্থকরা বোতল, কাঠ, এবং আগুনের ফটকা নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, ম্যাচটি সাময়িকভাবে স্থগিত করতে হয় বেশ কিছুক্ষনের জন্য ।
ম্যাচ পুনরায় শুরু হলেও এই সহিংসতা ভারতীয় ফুটবলের জন্য এক কালো দিন হয়ে দাঁড়ায়। এটি স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দুই দলের সমর্থকদের আচরণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছে।
১. ডুরান্ড কাপে ডার্বি বাতিল
সিডনি টেস্টে বিরাট ধাক্কা! চোট নিয়ে মাঠ ছাড়লেন বুমরাহ, দ্রুত পাঠানো হল হাসপাতালে
২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় বিতর্কটি ছিল কলকাতার ফুটবল মহাযুদ্ধ তথা মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে ডুরান্ড কাপে ডার্বি বাতিল হওয়া। এই ডার্বি, যা সল্টলেক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল. কলকাতায় চলমান অশান্তির কারণে বাতিল হয়। কলকাতা পুলিশের সাথে আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কলকাতায় একটি গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল, যেখানে আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল। বহু মানুষ এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন এবং স্টেডিয়ামের কাছাকাছি কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয়। এই পরিস্থিতিতে ম্যাচ বাতিল হলেও, উভয় ক্লাবের সমর্থকরা একত্রিত হয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন। এটি কলকাতা ময়দানের জন্য এক কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়।