চিন বিরোধিতায় এক সুরে ভারত-বাংলাদেশ

ব্রহ্মপুত্র নদ, যাকে উত্তর-পূর্ব ভারতের এবং বাংলাদেশের প্রাণরেখা বলা হয়, বর্তমানে এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। চিন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদীর (Brahmaputra River) উপর বিশ্বের সবচেয়ে বড়…

A powerful image depicting the unity of India and Bangladesh against China's mega dam on the Brahmaputra River

ব্রহ্মপুত্র নদ, যাকে উত্তর-পূর্ব ভারতের এবং বাংলাদেশের প্রাণরেখা বলা হয়, বর্তমানে এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। চিন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদীর (Brahmaputra River) উপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর উপর নির্ভরশীল দুই দেশের মানুষের জীবনযাত্রা এবং কৃষি ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চিনের পরিকল্পনা
চিন ঘোষণা করেছে যে তারা তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর একটি মেগা হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প নির্মাণ করবে। এই বাঁধটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং এটি ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। নদীর উজানে এই প্রকল্প তৈরি হলে পানিপ্রবাহে নিয়ন্ত্রণের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের জল নিরাপত্তা এবং কৃষি ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

   

ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ
চিনের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ভারতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভারত অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং নদীর উপর ১০ গিগাওয়াট ক্ষমতার একটি মেগা হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। সিয়াং নদী ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি শাখা, এবং ভারতের এই প্রকল্প চিনের বাঁধের প্রভাব প্রতিহত করতে একটি বাফার স্টোরেজ হিসেবে কাজ করবে।

ভারতের এই পদক্ষেপ চিনের বাঁধ প্রকল্পের কারণে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে এবং ব্রহ্মপুত্রের পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে। এই প্রকল্পটি শুধু ভারতের জল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, বরং বাংলাদেশকেও উপকৃত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন
বাংলাদেশ, যা ব্রহ্মপুত্রের নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত, চিনের বাঁধ পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলির একটি, যা দেশটির কৃষি, মৎস্য, এবং পানীয় জলের সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিনের বাঁধ প্রকল্প নদীর পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে, যা বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর বিপুল প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশের সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসে যৌথভাবে চিনের এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে। দুই দেশ আন্তর্জাতিক মহলে এই বিষয়টি উত্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে এবং যৌথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছে।

কূটনৈতিক সমাধানের প্রয়োজন
চিন, ভারত এবং বাংলাদেশ – এই তিন দেশের মধ্যে একটি কূটনৈতিক সমঝোতা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিনের বাঁধ প্রকল্প শুধুমাত্র ভারত ও বাংলাদেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে না, বরং এশিয়ার বৃহত্তর পরিবেশগত ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।

ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়েই আন্তর্জাতিক ফোরামে এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর চিনের একতরফা প্রকল্পের সিদ্ধান্তকে তারা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।

নদীর ভবিষ্যৎ: চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
ব্রহ্মপুত্র নদ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য। চিনের বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে দুই দেশের মানুষ খাদ্য সঙ্কট, পানির অভাব এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষম সমাধানে পৌঁছানোই এই সংকটের একমাত্র পথ বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র শুধু একটি নদী নয়; এটি কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চিনের বাঁধ প্রকল্পের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত ও বাংলাদেশের ঐক্য এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।