মহাকুম্ভে কালো মেঘ! যোগীকে সতর্কবার্তা মৌলানার

মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫-এ (Kumbh Mela 2025) মুসলিমদের গণধর্মান্তরণের আশঙ্কা প্রকাশ করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখেছেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ মৌলানা শাহাবউদ্দিন রাজভি বেরেলভি। চিঠিতে…

Kumbh Mela 2025

মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫-এ (Kumbh Mela 2025) মুসলিমদের গণধর্মান্তরণের আশঙ্কা প্রকাশ করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখেছেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ মৌলানা শাহাবউদ্দিন রাজভি বেরেলভি। চিঠিতে তিনি মহাকুম্ভ মেলায় মুসলিমদের ধর্মান্তরণের পরিকল্পনা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

মৌলানা রাজভি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, “মহাকুম্ভ মেলার সময় কিছু সংগঠন মুসলিমদের ধর্মান্তরণ করার পরিকল্পনা করছে। এই ধরনের কার্যক্রম শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যই নয়, গোটা দেশের সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি শুধুমাত্র বিভাজনের বীজ বপন করবে না, বরং জাতীয় স্থিতিশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

   

মহাকুম্ভ ও ধর্মান্তরণ বিতর্ক
মহাকুম্ভ মেলা, যা প্রতি ১২ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি অত্যন্ত পবিত্র উৎসব। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এই মহোৎসবে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে। তবে, এবারের মহাকুম্ভ ঘিরে ধর্মান্তরণের অভিযোগ নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

মৌলানা রাজভি তার বক্তব্যে জানিয়েছেন যে এই ধরনের ধর্মান্তরণের কর্মসূচি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “ধর্মীয় স্বাধীনতা সংবিধানিক অধিকার। কেউ তার ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হলে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”

যোগীর প্রতি মৌলানার বার্তা
মৌলানা রাজভি উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করেছেন যে যদি এই ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে, তবে তা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে, যা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, “ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও শান্তি বজায় রাখা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। মহাকুম্ভ একটি ধর্মীয় উৎসব, এবং তা কোনো বিশেষ ধর্মকে লক্ষ্য করে বিভাজন বা সংঘাত তৈরির জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উচিত তৎক্ষণাৎ এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা।”

মুসলিম সমাজে প্রতিক্রিয়া
মৌলানার এই চিঠি মুসলিম সমাজে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই এই উদ্যোগকে সমর্থন করে বলেছেন যে এই ধরনের কার্যকলাপ শুধু মুসলিম সম্প্রদায়কেই নয়, দেশের সামগ্রিক ধর্মীয় সম্প্রীতিকে ব্যাহত করতে পারে।

উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, “এ ধরনের কার্যক্রম জাতিকে বিভক্ত করে। ধর্মান্তরণ ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হওয়া উচিত, কোনো ধরনের চাপ বা প্ররোচনা ছাড়াই।”

সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে উত্তরপ্রদেশের মতো সংবেদনশীল রাজ্যে এই ধরনের অভিযোগ সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে রাজ্য সরকারকে এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা সবার নজরে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরীক্ষা
মহাকুম্ভ মেলার মতো বৃহৎ আয়োজন ধর্মীয় সহাবস্থানের উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু যদি এই মঞ্চে ধর্মান্তরণের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে তা গোটা দেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

মৌলানা রাজভির চিঠি শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ভাবধারার প্রতি একটি আহ্বান। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং শান্তি বজায় রাখতে পদক্ষেপ নেবে। সময়ই বলে দেবে, মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫ ধর্মীয় সহিষ্ণুতার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে নাকি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে।