মোহনবাগান (Mohun Bagan) সুপার জায়ান্টের নতুন বছর শুরু হয়েছে দুর্দান্ত একটি জয়ের মাধ্যমে। ২০২৫ সালের প্রথম ম্যাচেই কলকাতা ময়দানে নিজেদের হোম ম্যাচে দুর্বল হায়দরাবাদ এফসিকে পরাজিত করেছে মোহনবাগান। এই জয়ের মাধ্যমে তাদের পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে, এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এ শীর্ষে থাকার পথে তারা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এই ম্যাচটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হায়দরাবাদ এফসি তাদের কাছ থেকে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করেছিল, কিন্তু মোহনবাগান তাদের আধিপত্য বজায় রেখে সহজেই জয়ী হয়েছে।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অধিনায়ক শুভাশিস বসু এই জয়ের পর দলের পারফরম্যান্স নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানান, ‘‘বছরের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করা খুবই ভালো। আমাদের খেলোয়াড়রা যে পারফরম্যান্স করেছে, তাতে টেবিলের শীর্ষে থাকার অধিকার আমাদের। সবাই দুর্দান্ত খেলেছে, তবে আরও বেশি গোল করা যেতে পারত।’’ তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে দলের উন্নতির প্রতি তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা প্রতিভাত হয়েছে।
ডার্বি নিয়ে শুভাশিসের পরিকল্পনা
মোহনবাগানের পরবর্তী লক্ষ্য হলো ১১ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কলকাতা ডার্বি। এই ডার্বি ম্যাচটি যে কোনো ফুটবলপ্রেমীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কলকাতা ময়দানের দুই বড় ক্লাব, মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল, নিজেদের মধ্যে এই ম্যাচে লড়াই করবে। বিশেষত, ২০২৫ সালের প্রথম ডার্বি মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি তাদের জন্য মর্যাদা রক্ষার লড়াই।
তবে ডার্বি ম্যাচের স্থান নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতায় প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে গঙ্গাসাগর মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সারা দেশ থেকে পূর্ণার্থীরা ভিড় জমায়। মেলার জন্য কলকাতা এবং তার আশপাশের এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সেই কারণে এবার ডার্বি ম্যাচের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না বলে বিধাননগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ মোহনবাগান সুপার জায়েন্টকে একটি মেইল পাঠিয়েছে। এর ফলে এই ম্যাচটি কলকাতায় আয়োজিত হতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এমনকি, যদি কলকাতায় এই ম্যাচটি আয়োজন সম্ভব না হয়, তবে তা অন্য কোনো রাজ্যে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
তবে, এই অনিশ্চয়তার মাঝেও মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিস বসু দলের মনোবল তুলে ধরে বলেন, ‘‘ডার্বি ম্যাচ কখনওই প্রেডিক্ট করা যায় না। এই ম্যাচে পজিশন যাই হোক না কেন, দুই দলই নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলে। আমরাও আমাদের সেরাটা দেব এবং জেতার চেষ্টা করবো। আমাদের লক্ষ্য হলো ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লিগের শীর্ষস্থান ধরে রাখা।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি একজন বাঙালি ফুটবলার হিসেবে চাইবো যে, এই ডার্বি কলকাতার মাটিতেই হোক। আমাদের সকল সমর্থকরা যেভাবে নব্বই মিনিট ধরে মাঠে দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য গলা ফাটান, তাদের সামনে আমরা খেলা চালিয়ে যেতে চাই।’’ শুভাশিসের এই মন্তব্যটি তার দেশপ্রেম এবং বাগান ক্লাবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার পরিচয় দেয়।
ডার্বির গুরুত্ব এবং প্রত্যাশা
কলকাতা ডার্বি শুধু একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, এটি একটি আবেগের নাম। এই ম্যাচে দুই দলই শুধুমাত্র জয়লাভের জন্য লড়াই করে না, বরং নিজেদের সম্মান এবং ক্লাবের ইতিহাস রক্ষার জন্যও তারা মাঠে নামেন। মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা এই ম্যাচকে নিজেদের গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে মনে করে থাকেন। ইতিহাসের পাতায় এই ডার্বির স্থান চিরকাল অমলিন থাকবে, এবং দুটো দলের সমর্থকদের কাছে এটি একটি ঐতিহ্যের অংশ।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের গত কয়েক মৌসুমের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বলা যায়, তারা বেশ শক্তিশালী একটি দল হিসেবে পরিণত হয়েছে। তাদের আক্রমণভাগ এবং রক্ষণভাগ উভয়ই উন্নত হয়েছে। কিন্তু, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডার্বিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। তবে মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিস বসু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, তারা এই ম্যাচে তাদের সেরাটা দিতে সক্ষম হবে।
ডার্বি ম্যাচের আগে, মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের মধ্যে একটি বিশেষ উদ্দীপনা থাকে। প্রতিটি ডার্বি ম্যাচই তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। শুভাশিস তার দলের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা এই ম্যাচে শুধুমাত্র জয়ের জন্য লড়বেন, এবং দলের মধ্যে একটি দুর্দান্ত সমন্বয় রয়েছে যা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।
ভবিষ্যতের দিকে নজর
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের জন্য এই মৌসুমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা ইন্ডিয়ান সুপার লিগের শীর্ষে অবস্থান বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। দলের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে মিলে মাঠে দারুণ পারফরম্যান্স করছে, এবং অধিনায়ক শুভাশিস বসু তাদের প্রতি আস্থা রাখছেন। তিনি জানান, ‘‘আমরা একসাথে সবাইকে নিয়ে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, এবং আমাদের সমর্থকদের সমর্থন আমাদের শক্তি দেয়।’’
ডার্বি ম্যাচটি যখনই অনুষ্ঠিত হবে, তা যে একটি ঐতিহাসিক এবং উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হবে তা নিশ্চিত। ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, এই হাইভোল্টেজ ম্যাচের জন্য যা মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের মধ্যে চিরকালীন rivalry-এর নতুন অধ্যায় খুলে দেবে।