রেশন দুর্নীতির তদন্তে আদালতের প্রশ্নের মুখে ইডি

রেশন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর জামিন শুনানিতে বিচারকের একাধিক মন্তব্য ইডির তদন্ত…

west bengal Ration Scam Investigation

short-samachar

রেশন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর জামিন শুনানিতে বিচারকের একাধিক মন্তব্য ইডির তদন্ত প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

   

তদন্তের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন
বিচারক ইডির আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “নদিয়ার এফআইআরটি তো একটি চুরির মামলা ছিল। সেটিকে কীভাবে দুর্নীতির মামলা হিসেবে দেখছেন?” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “যদি এটি দুর্নীতির মামলা হয়, তাহলে কোনও সরকারি অফিসারকে এখনও কেন গ্রেফতার করা হয়নি? যাদের সিল পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? শর্ট সাপ্লাইয়ের বিষয়ে কোনও অভিযোগ আপনাদের কাছে এসেছে কি?”

বিচারক আরও বলেন, “ডিস্ট্রিবিউটার বা মিলাররা যদি চুরি করে থাকেন, তাহলে মন্ত্রী কীভাবে যুক্ত হলেন? ধরে নিলাম, তার আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। কিন্তু সেই টাকা কি সরাসরি রেশন দুর্নীতি থেকে এসেছে? এ সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ আপনারা দেখাতে পেরেছেন?”

ইডির জবাব
ইডির আইনজীবী আদালতকে জানান, তারা চুরির অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়েই এই দুর্নীতির তথ্য পেয়েছেন। “লাইসেন্সবিহীন দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ এনপিজি বস্তা উদ্ধার হয়েছে। তবে এই বস্তা চুরির কোনও অভিযোগ দাখিল করা হয়নি। পুরো চেইনটি একটি নির্দিষ্ট নির্দেশনায় কাজ করছিল,” দাবি করেন ইডির আইনজীবী।

তিনি আরও বলেন, “আমরা গঙ্গাসাগর থেকে গঙ্গোত্রী যাওয়ার চেষ্টা করছি। যখন হিমালয় অর্থাৎ আসল উৎসে পৌঁছানোর চেষ্টা করি, তখন দেখতে পাই, এই অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে এসেছে। তদন্ত এখনও চলছে।”

ইডি হেফাজতের প্রশ্নে তর্ক
ইডি হৃতেশ সহ তিনজন অভিযুক্তকে আরও হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়। তবে বিচারক তাদের প্রশ্ন করেন, “গত ৯ দিনে কী করেছেন? কেন আবার হেফাজত প্রয়োজন? শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যমে প্রচারের জন্য হেফাজত চাওয়া ঠিক নয়।”

ইডি জানায়, তারা ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটারের বয়ান কনফ্রন্ট করেছে এবং নতুন কিছু নথি নিয়ে ধৃতদের মুখোমুখি করিয়েছে। তবে বিচারক জানতে চান, “আপনারা আগে এতবার জেরা করার পর এখন নতুন কী তথ্য পেতে চাইছেন?”

অভিযুক্তদের পক্ষের যুক্তি
অভিযুক্তদের আইনজীবীরা ইডির বক্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। শান্তনুর আইনজীবী জানান, তার মক্কেল ২৩ বার ইডির সামনে হাজিরা দিয়েছেন। বিচারক ইডির উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যদি আগের বয়ানে কোনও অসঙ্গতি খুঁজে না পান, তাহলে এখন নতুন করে হেফাজত চাওয়ার কারণ কী?”

ইডি জানায়, তারা প্রসিড অফ ক্রাইমের রাউটিং ট্র্যাক করার চেষ্টা করছে। একজন সাক্ষীর নতুন বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে সোনার ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ পাচারের কথা উঠে এসেছে।

আদালতের নির্দেশ
সব দিক বিবেচনা করে বিচারক ৪ জানুয়ারি, শনিবার পর্যন্ত অভিযুক্তদের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, তদন্তের প্রতিটি ধাপে ইডিকে আদালতে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে।

রেশন দুর্নীতি মামলা নিয়ে ইডির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতের প্রশ্ন তোলায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইডির দাবি, তারা হিমালয়ের উৎস পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বিচারকের বক্তব্য অনুসারে, তাদের বর্তমান প্রমাণ ও কার্যক্রম সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তদন্তের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা এখন সময়ই বলবে।