ডাক বিভাগ থেকে লাভের ‘লোভ’, সাধারণের সঞ্চয়ে কোপ!

শুধু সেবা নয়, এবার ডাক বিভাগকে (India Post) লাভজনক করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। দেশের ঐতিহ্যবাহী পোস্ট অফিস, যা বহু মানুষের সঞ্চয়ের অন্যতম প্রধান ভরসা, এবার…

India Post Savings Schemes

শুধু সেবা নয়, এবার ডাক বিভাগকে (India Post) লাভজনক করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। দেশের ঐতিহ্যবাহী পোস্ট অফিস, যা বহু মানুষের সঞ্চয়ের অন্যতম প্রধান ভরসা, এবার সেটি লজিস্টিকস ও পরিষেবার মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎসে পরিণত করতে চায় সরকার। এই পরিকল্পনাকে ঘিরে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।

ডাক বিভাগের লাভের পরিকল্পনা
সরকারি সূত্রের খবর অনুযায়ী, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ২০২৯ সালের মধ্যে ডাক বিভাগকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে প্রয়োজনীয় তহবিলের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। ডাক বিভাগকে শুধুমাত্র সঞ্চয় ও পেনশন পরিষেবা নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ লজিস্টিকস ও ই-কমার্স পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থায় পরিণত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে অপারেশনাল দক্ষতা বাড়ানো এবং গ্রাহক ধরে রাখার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।

   

একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, “ডাক বিভাগ তার মৌলিক সেবাগুলি অক্ষুণ্ণ রেখেই নতুন আয় উৎস তৈরি করতে চায়। এজন্য ডাকঘরকে আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা হবে।”

সাধারণ মানুষের উদ্বেগ
কিন্তু সরকারের এই পদক্ষেপে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। পোস্ট অফিস বহুদিন ধরেই দেশের অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য সঞ্চয়ের একটি নিরাপদ জায়গা। মেয়াদী জমা (এফডি), মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প, এবং কিশোরীদের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মতো প্রকল্পগুলি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক স্থিতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু লাভের লক্ষ্যপূরণের জন্য ডাক বিভাগের মূলধন সংগ্রহের কৌশল যদি সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদ হার কমিয়ে দেয় বা পরিষেবাগুলির খরচ বাড়িয়ে তোলে, তাহলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়বে, কারণ ডাকঘর গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রধান বিকল্প।

সিন্ধিয়ার প্রতিশ্রুতি
যোগাযোগ মন্ত্রী অবশ্য এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন যে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বরং পোস্ট অফিসের লজিস্টিকস পরিষেবাগুলি বাড়িয়ে এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির সাথে অংশীদারিত্ব তৈরি করে নতুন আয়ের পথ খোঁজা হবে।

মন্ত্রী জানান, “আমরা ডাক বিভাগের মাধ্যমে আরও বেশি গ্রাহক পরিষেবা নিশ্চিত করতে চাই। প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের সময় কমানো এবং গ্রাহকদের জন্য নতুন পরিষেবা আনাই আমাদের লক্ষ্য।”

সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ
ডাক বিভাগকে লাভজনক করতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বর্তমানে ডাক বিভাগে কর্মীদের বেতন ও পেনশন বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ বিপুল। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের বহু পোস্ট অফিসে এখনো আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছায়নি। এ ছাড়া বেসরকারি কুরিয়ার কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তবুও, সরকার এই পদক্ষেপে আশাবাদী। সিন্ধিয়া বলেছেন, “২০২৯ সালের মধ্যে ডাক বিভাগকে একটি লাভজনক সংস্থায় রূপান্তরিত করা সম্ভব, যদি আমরা সঠিক পদ্ধতিতে বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনা করতে পারি।”

ডাক বিভাগের লাভজনকতার পরিকল্পনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সঞ্চয় প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ এবং গ্রামীণ ভারতের ওপর এর প্রভাব নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। সরকারের উচিত হবে লাভজনকতা এবং সেবা উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করা, যাতে সাধারণ মানুষের আস্থা বজায় থাকে।