দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে (Delhi Polls) এবার একাই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দিল্লি বিজেপির নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, আগামী নির্বাচনে তাদের দল সমস্ত ৭০টি আসনে প্রার্থী দিবে এবং কোনও অ্যালায়েন্স বা জোটে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। বিশেষত, দিল্লির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই লোক্ষন সিং পাঞ্জাবী (LJP) এবং জনতা দল (ইউ) (JDU)-এর সঙ্গে জোটে নির্বাচন করা হলেও এবার বিজেপি একাই নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করেছে।
বিজেপির একক লড়াইয়ের ঘোষণা
দিল্লি বিজেপি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা এবার সমস্ত ৭০টি বিধানসভা আসনে এককভাবে লড়াই করবে। দলের সভাপতি আদেশ গুপ্ত, সেমি শর্মা এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতারা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই নির্বাচনে বিজেপি দলীয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং লিপজ এবং জনতা দল (ইউ)-এর সঙ্গে কোনরকম জোট করবে না। এ বিষয়ে আদেশ গুপ্ত বলেন, “আমরা পুরোদমে ৭০টি আসনে লড়াই করব এবং মানুষের কাছে আমাদের কর্ম এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নমূলক কাজগুলো তুলে ধরব।”
কেন এই সিদ্ধান্ত?
বিজেপির এই সিদ্ধান্তকে দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। দিল্লিতে ২০১৫ সালে দিল্লি নির্বাচনে বিজেপির বিপুল পরাজয়ের পর থেকেই দলের মধ্যে একাধিক ধরণের আলোচনা চলছে। ২০১৫ সালে বিজেপির মূল জোট সঙ্গী শিরাজী এজেন্সির পক্ষ থেকে দিল্লির মঞ্চে উঠে আসার পর তার মিত্র দলের মধ্যে চলছিল গুঞ্জন, যার কারণে বিজেপি সেখানে পরাজিত হয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে বিজেপি এবার নিজেদের শক্তি বাড়াতে চায় এবং একাই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লোক্ষন সিং পাঞ্জাবী (LJP) এবং জনতা দল (ইউ) এর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি
যদিও অতীতে বিজেপি LJP এবং JDU-এর সঙ্গে একসঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, তবে এবার সেই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। কিছুদিন আগে, দিল্লি বিজেপির নেতা গোপাল রাও জানিয়েছিলেন, তাদের দলের মধ্যে কোনো জোট তৈরি হবে না। এর পেছনে বেশ কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্রথমত, দিল্লির রাজনীতিতে বিজেপির শক্তি বাড়ানোর প্রক্রিয়া; দ্বিতীয়ত, দলের ভেতরে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দলীয় পরিচিতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২০ বিধানসভা নির্বাচন এবং বিজেপির প্রস্তুতি
২০২০ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন ছিল বিজেপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেসময়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি (AAP) বিপুলভাবে বিজয়ী হয়। দিল্লি বিজেপি বর্তমানে শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, এবং দলের কর্মী থেকে শুরু করে প্রতিটি নেতা দলে একটি নতুন উদ্যম নিয়ে কাজ করছে। দিল্লির নাগরিকদের কাছে তাদের দলীয় প্রচারের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো, এবং তাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান তুলে ধরা হবে, যাতে বিজেপির সমর্থন অর্জন করা যায়।
আম আদমি পার্টি (AAP)-এর প্রতি বিজেপির কড়া সমালোচনা
বিজেপি নেতারা বারবার আম আদমি পার্টির (AAP) সরকারের নীতি ও কাজকর্মের সমালোচনা করেছেন। তারা দাবি করেছেন, কেজরিওয়ালের সরকার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের উন্নয়নমূলক কাজের ভাঁওতাবাজি করেছে। দিল্লি বিজেপির পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে যে, তারা এবার অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের কাজকর্মের বিস্তারিত খতিয়ান তুলে ধরবে এবং জনগণের মধ্যে এই সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বার্তা পৌঁছে দেবে।
বিজেপির আসন্ন পরিকল্পনা
দিল্লি বিজেপি এককভাবে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, এখন দলীয় প্রচারে আরও জোরদার মনোযোগ দিতে শুরু করেছে। বিজেপি তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মসূচি পরিচালনা করবে, যাতে তারা জনগণের কাছে আরও গভীরভাবে পৌঁছাতে পারে। বিশেষত, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা, দিল্লির উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হওয়া উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো তুলে ধরা হবে।
বিজেপির দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত একদিকে দলের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন, অন্যদিকে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহেরও চিহ্ন। কংগ্রেসের পাশাপাশি আম আদমি পার্টির বিরোধিতা করার জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিজেপি এবার আশা করছে, তাদের একক প্রচারণা দিল্লির জনগণের মধ্যে ভাল সাড়া ফেলবে এবং দলকে রাজনীতির মঞ্চে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করবে।