ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC) ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ইতিহাসে কখনও টানা তিন ম্যাচে জয়ী হতে পারেনি। এমন তথ্য প্রায় সকলেই জানেন। কিন্তু ২০২৪ সালের শেষে (2024 Year Ending) তাদের জন্য এক নতুন কীর্তি গড়ার সুযোগ এসেছে। আজ হায়দরাবাদ এফসির (Hyderabad FC) বিপক্ষে নামতে চলছে মশাল বাহিনী। এদিনের ম্যাচ জিতে তিন পয়েন্ট অর্জন করলেই আইএসএলে জয়ের হ্যাটট্রিক (Hattrick) করবে লাল-হলুদ শিবির। এমন এক মাইলস্টোন (New Milestone), যা মশাল ব্রিগেড (Torch Bearer) সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। আজকের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল যদি জিততে পারে, তাহলে এটি হবে ক্লাবের ইতিহাসে এই টুর্নামেন্টে প্রথমবার টানা তিনটি জয়।
এই ইংলিশ ফুটবলারের দিকে নজর ইমামি ইস্টবেঙ্গলের
এই মরসুমের প্রথম থেকেই ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশেষ করে গত কয়েকটি ম্যাচে তাদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে দলের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তারা এখন এক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যা সমর্থকদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। গত পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটি ম্যাচে জয়লাভ করেছে, যা তাদের সাম্প্রতিক উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
পাঁচ ম্যাচে চারটি জয় আসার পর, লাল-গ্লুধ ফুটবলারদের মনোভাব অনেকটাই উন্নত। বিশেষত, পাঞ্জাব এফসি এবং জামশেদপুর এফসির বিপক্ষে তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে তারা দুটি গোল পিছিয়ে পড়েও, দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে এসে চার গোল দিয়ে জয় লাভ করেছে। জামশেদপুরের বিপক্ষে তারা নিজেদের মাঠে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে জয় পেয়েছে। কার্যত যেন এই জয়গুলো তাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বিরাট চমক! মনভীর সিংকে দলে নেওয়ার পথে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব
তবে, ইস্টবেঙ্গলের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাদের চোট সমস্যা নিয়ে। দলের গুরুত্বপূর্ণ ফরাসি মিডফিল্ডার মাদিহ তালাল, যিনি ওডিশা ম্যাচে হাঁটুর চোট পেয়ে পুরো মরসুম থেকে ছিটকে গিয়েছেন। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সাউল ক্রেসপোও ইনজুরির কারণে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগে মাঠে ফিরতে পারবেন না। চোটের তালিকায় নতুন সংযোজন হয়েছেন ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপ। আর কার্ড সমস্যায় আজকের ম্যাচে নেই রক্ষণভাগের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হেক্টর ইউস্তে। তাই, ইস্টবেঙ্গলকে এই ম্যাচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছাড়াই মাঠে নামবে সে বিষয়ে নিশ্চিত।
তবে, ইস্টবেঙ্গল যে মাত্র কয়েকটি খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল তা নয়। তাদের স্কোয়াডের অন্যান্য খেলোয়াড়েরা যেমন আনোয়ার আলি, পিভি বিষ্ণু, সৌভিক চক্রবর্তী এবং অধিনায়ক ক্লেন্টন সিলভা, সকলেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। বিশেষ করে ক্লেটন সিলভা ক্রমশ নিজের ছন্দে ফিরে আসছেন, আর দিমিত্রি দিয়ামান্তাকসও গত ম্যাচে গোল করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। হিজাজি মাহেরও ফর্মে আছেন। এই সব খেলোয়াড়দের উপস্থিতি ইস্টবেঙ্গলের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে।
জোড়া ধাক্কা পাঞ্জাবের! কেরালা ম্যাচে থাকছেন না এই দুই তারকা
এদিকে, হায়দরাবাদ এফসি এই মরসুমে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তাদের রক্ষণভাগ দুর্বল এবং গত পাঁচ ম্যাচে তারা ১৫ গোল খেয়েছে। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিপক্ষে তারা দুই গোল করে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে পড়েছিল, যদিও তারা শেষ পর্যন্ত হারে পরিণত করে। হায়দরাবাদের আগে ওড়িশা এফসি থেকে ৬ গোল খেয়েছিল, যা তাদের রক্ষণের দুর্বলতার একটি বড় উদাহরণ। তাদের কোচও দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন, আর বর্তমানে সহকারী কোচ শামিল চেম্বাকাথ দলের দায়িত্ব পালন করছেন।
এখন, ইস্টবেঙ্গলকে বিপক্ষে ফর্মে থাকা হায়দরাবাদ দলটি যদি নিজেদের রক্ষা না করতে পারে, তবে তাদের কাছে জয় পাওয়া কঠিন হবে। বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গল যে আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলছে, তা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তবে, ফুটবল একটি অনিশ্চিত খেলা এবং এখানে যে কোন কিছুই হতে পারে।
ভিদালের লাল কার্ড প্রসঙ্গে কী বললেন মোলিনা?
তবে, ইস্টবেঙ্গল নিজেদের দলে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে, যেমন মহম্মদ রকিপের জায়গায় প্রভাত লাকরা বা নিশু কুমারকে খেলানো হতে পারে। পাশাপাশি ইউস্তের জায়গায় আনোয়ার আলি মাঠে নামতে পারেন। এছাড়া, জিকসন সিংকে মাঝমাঠে খেলানো হতে পারে।
সবশেষে, ইস্টবেঙ্গল যদি এই ম্যাচে জিততে পারে, তাহলে তারা ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এমন একটি জয় ক্লাব এবং তাদের সমর্থকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এখন শুধু অপেক্ষা, যে কীভাবে এই ম্যাচটি পরিণতি লাভ করে।