নয়াদিল্লি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর প্রয়াণে ঘটে গেল একটা যুগের অবসান৷ শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল৷ কিন্তু, মনমোহন জমানায় তাঁকে নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি৷ ১০ বছর ধরে যিনি দেশ শাসন করলেন, সেই মনমোহন সিং – এর নাকি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথাই ছিল না। তাই তো তাঁর বায়োপিকের নামকরণ করা হয়, ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’। তাঁকে নিয়ে যে দলের হাই কমান্ড চিন্তাভাবনা করছে, সেই আভাসও ছিল না প্রয়াত অর্থনীতিবিদের৷ একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁকে বেছে নেন তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী৷ আর সেটাই ছিল মাস্টারস্ট্রোক৷ হাই কমান্ডের ঘোষণায় চমকে গিয়েছিলেন অনেকেই। ঝুলিতে কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ডের ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অনেকেই মনমোহনকে মেনে নিতে পারেননি৷ (Manmohan Singh political legacy)
অত্যন্ত নীরব, শান্ত মানুষ Manmohan Singh political legacy
মনমোহন সিং ছিলেন অত্যন্ত নীরব, শান্ত একজন মানুষ৷ রাজনীতিবিদদের মতো বাগ্মী ছিলেন না৷ অনেকেই তাঁর সমালোচনা করে বলতেন, তিনি নাকি ‘ম্যাডামে’র রিমোট কন্ট্রোলের দ্বারা পরিচালিত৷ নিজের সিদ্ধান্তে নয়, গান্ধী পরিবারের অঙ্গুলিহেলনে দেশ চালান৷ এত সমালোচনা সত্ত্বেও ২০০৮ সালে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময় তাঁর অনমনীয় মনোভাব সকলকে অবাক করেছিল। সরকার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল৷ কিন্তু তিনি নিজের সিদ্ধান্তে ছিলেন অবিচল।
এর আগে ১৯৯১ সালে নরসিমা রাও-এর আমলেও তাঁর ক্যারিশ্মা দেখেছে গোটা দেশ তথা বিশ্ব। সেই সময় মনমোহন ছিলেন দেশের অর্থমন্ত্রী। জিডিপি একেবারে ধসে পড়েছে৷ বিদেশি মুদ্রাভাণ্ডারে ছিল ১ বিলিয়ন ডলার৷ এই পরিস্থিতি থেকে বেরতে উদারনীতি গ্রহণ করেন সিং। রাতারাতি লাইসেন্স রাজের সমাপ্তি ঘটিয়ে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করে দেশ৷ যা দেশের অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ফেলে৷
ইতিহাস মনে রাখবে আমাকে Manmohan Singh political legacy
২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিত ছিলেন মনমোহন সিং৷ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মাত্র তিনবার সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন তিনি৷ শেষবার সাংবাদিক বৈঠক করে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের কয়েক মাস আগে৷ যেখানে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দাবি করেছিলেন, তার নেতৃত্ব দুর্বল ছিল না৷ বর্তমান মিডিয়া ও বিরোধীদের তুলনায় ইতিহাস তাঁর প্রতি অনেক বেশি দয়াপ্রবণ থাকবে। এই বক্তব্যটি তাঁর দীর্ঘ দশ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের শেষলগ্নে আসে৷ একাধিকবার ‘দুর্বল’ নেতার তকমা পাওয়ার পরও এই দৃঢ় মন্তব্য করেছিলেন মনমোহন৷
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মনমোহন সিং বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে আমি দুর্বল প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমি মনে করি ইতিহাস আমাকে বর্তমান সময়ের মিডিয়া বা সংসদের বিরোধীদের চেয়ে সঠিক মূল্যায়ন করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি যতটুকু সম্ভব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে কাজ করেছি। এটি ইতিহাসের কাজ যে আমার কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করবে।”
নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা Manmohan Singh political legacy
ওই সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন। গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, “যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শক্তি নিরীহ নাগরিকদের গণহত্যা করার মাধ্যমে মাপা হয়, তাহলে আমি সেই ধরনের শক্তিকে সমর্থন করি না। আমি বিশ্বাস করি না যে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এমন ধরনের শক্তি থাকা উচিত।” ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে, এই মন্তব্য করেছিলেন তিনি৷
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, “আমি পূর্ণ আস্থা নিয়ে বলতে পারি, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ইউপিএ থেকেই আসবে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে, তা দেশের জন্য বিপজ্জনক হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে মোদী যা বলছেন তা বাস্তবায়িত হবে না।”
নেতৃত্ব দুর্বল ছিল না Manmohan Singh political legacy
মনমোহন সিং তাঁর দু’দফা মেয়াদ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ইউপিএ ১ এবং ইউপিএ ২ কংগ্রেসের সরকার পরিচালনার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতা করতে হলেও, তা ‘প্রান্তিক’ বিষয়গুলোর উপর৷ জাতীয় সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে কোনও আপস হয়নি। তিনি বলেছিলে, “কোনও সময়েও আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়নি, কারণ আমার নেতৃত্বে কোনও অক্ষমতা ছিল না।”
সিংহের বক্তব্য ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তিনি যেমন দাবি করেছেন, তেমনি তার কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন ভবিষ্যতের ইতিহাস করবে, এবং সে সময় হয়তো তার নেতৃত্বকে আরও ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
Bharat: The passing of former PM Manmohan Singh marks the end of an era. Despite criticism, his tenure saw significant economic reforms and the India-US nuclear deal. Known for his quiet demeanor, Singh’s legacy in Indian politics remains impactful.