বছর শেষে ভারত হারাল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রয়াত হলেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং (Manmohan Singh) । মিতভাষী, প্রজ্ঞাবান এবং বুদ্ধিদীপ্ত এই অর্থনীতিবিদ দেশের রাজনীতিতে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত গোটা রাজনৈতিক মহল। মনমোহন সিং (Manmohan Singh) শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, বরং তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী অর্থনীতিবিদ, যিনি দেশের অর্থনীতিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন।
মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি এক নতুন দিশা পায়। ১৯৯১ সালে যখন ভারত গভীর আর্থিক সংকটে ছিল, তখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং লিবারালাইজেশন, প্রাইভেটাইজেশন এবং গ্লোবালাইজেশন-এর মাধ্যমে দেশকে সংকট থেকে মুক্তি দেন। তাঁর হাত ধরেই ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। এই সময়েই তিনি প্রমাণ করেন যে, একজন প্রকৃত নেতৃত্ব কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
মনমোহন সিং (Manmohan Singh) ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই দশ বছরে তিনি অনেক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর সরকারের আমলেই চালু হয়েছিল ১০০ দিনের কাজ, যা দেশের গরিব মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছিল। এছাড়াও, আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি তাঁর সরকারের অন্যতম সাফল্যের মাইলফলক।
তবে এই সাফল্যের সঙ্গে তাঁকে সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। বিরোধীরা তাঁকে ‘নীরব প্রধানমন্ত্রী’ (Manmohan Singh) বা ‘কাঠপুতুল প্রধানমন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করত। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রভাবের জন্য তাঁকে অনেক সময় দুর্বল প্রধানমন্ত্রী(Manmohan Singh) বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মনমোহন সিং সব সময় তাঁর কাজের মাধ্যমে এই সমস্ত সমালোচনার যোগ্য জবাব দিয়েছেন।
নিজের সমালোচকদের উদ্দেশে মনমোহন সিং একবার বলেছিলেন, “আমি নীরব প্রধানমন্ত্রী (Manmohan Singh) ছিলাম না। আমি প্রতিটি বিদেশ সফরের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতাম।” তাঁর এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, সমালোচনার মুখেও তিনি আত্মবিশ্বাস হারাননি। বরং নিজের কাজ এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
মনমোহন সিং (Manmohan Singh) খুব বেশি কথা বলতেন না। তবে যেকোনো বৌদ্ধিক আলোচনায় তাঁর উপস্থিতি ছিল আলাদা। অর্থনীতি, সংস্কার, এবং সামাজিক কল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে তিনি গভীর গবেষণা এবং বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ পায় উন্নয়ন ও অগ্রগতির নতুন দিশা।
মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) প্রয়াণে দেশের রাজনৈতিক মহলে এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তিনি শুধু একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নন, বরং এক আদর্শ নেতাও ছিলেন। তাঁর শূন্যতা অনুভব করবে শুধু কংগ্রেস নয়, গোটা ভারত। তাঁর স্মৃতিতে দেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে সেই ব্যক্তিকে, যিনি নীরবে দেশের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন।