মেদহীন চেহারা, লম্বা গড়ন, আর অসাধারণ অভিনয়ের দক্ষতায় আজ তিনি দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন। তিনি আর কেউ নন, জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘মির্জাপুর’-এর জরিনা (Zarina )। সূক্ষ যৌনতা আর রাজনৈতিক চাল চতুরতায় তাঁর চরিত্র আজ সবার আলোচনায়। তবে এই অভূতপূর্ব সফলতার পেছনে রয়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়ার এক বিশেষ অধ্যায়।
শুরুটা কলকাতায়, শিখলেন অভিনয়ের খুঁটিনাটি
জরিনার চরিত্রে নজর কাড়া এই অভিনেত্রীর আসল নাম অনংশা বিশ্বাস। জন্ম ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, কলকাতায়। ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পরই তাঁর অভিনয়জীবনের প্রকৃত যাত্রা শুরু হয়। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ। তাই তিনি কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি এবং পেশাগতভাবে নিজেকে তৈরি করার জন্য পাড়ি দেন অস্ট্রেলিয়ায়।
অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার প্রভাব
অভিনয়ের প্রতি অনংশার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা আরও প্রখর হয় যখন তিনি যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন একাডেমি (TAFTA)-তে। এখান থেকে তিনি শুধু অভিনয়ের মৌলিক বিষয়গুলিই শিখেননি, বরং নিজের চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করার কৌশল আয়ত্ত করেন। অস্ট্রেলিয়ার এই পেশাদার প্রশিক্ষণই তাঁকে আন্তর্জাতিক মানের অভিনেত্রী হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
মঞ্চ থেকে ওয়েব সিরিজ
অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে তিনি শুরু করেন মঞ্চ নাটক। মঞ্চে অভিনয়ের সময়ই তিনি সুযোগ পান নামী অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ এবং শেফালি শাহের সঙ্গে কাজ করার। এই অভিজ্ঞতা তাঁর অভিনয়জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এরপর, বলিউডে তাঁর যাত্রা শুরু হয়।
‘খোয়া খোয়া চাঁদ’ দিয়ে প্রথম পরিচিতি
সুদূর মুম্বাইতে নিজের জায়গা তৈরি করা সহজ ছিল না। তবে ২০০৭ সালে পরিচালক সুধীর মিশ্রের চলচ্চিত্র ‘খোয়া খোয়া চাঁদ’-এ শিশু অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করেন অনেকেই। এরপরে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে করতেই ধীরে ধীরে তিনি নজরে আসতে থাকেন।
‘লভ শভ তে চিকেন খুরানা’ এবং সাফল্যের পথে যাত্রা
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউড ছবি ‘লভ শভ তে চিকেন খুরানা’-তে একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেন অনংশা। তাঁর অভিনয়ে ছিল সাবলীলতা, যা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।
মির্জাপুর: জনপ্রিয়তার শীর্ষে
তবে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ব্রেক আসে ‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজে জরিনার চরিত্রে। এখানে তিনি শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকেই প্রমাণ করেননি, বরং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতায় মোড়ানো একটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলেন। চরিত্রটির সূক্ষ্ণ যৌনতায় ভরা দৃশ্য এবং দৃঢ় মনোভাব দর্শকের মন কেড়েছে। অনংশার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার পেছনে অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর প্রশিক্ষণ যে কতটা কার্যকরী ছিল, তা স্পষ্ট।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
আজ অনংশা বিশ্বাস শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক অভিনয়জগতের একটি উজ্জ্বল নাম। তাঁর কাজ প্রমাণ করে যে একজন শিল্পীর প্রকৃত সাফল্যের পেছনে থাকে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ।
তাঁর যাত্রা অনেক তরুণ-তরুণীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যারা ছোট শহর থেকে উঠে এসে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যেতে চান। অনংশার গল্প দেখিয়ে দেয়, স্বপ্ন দেখার সাহস থাকলে এবং সঠিকভাবে তা অনুসরণ করলে সাফল্য নিশ্চিত।