হুগলির শেওড়াফুলিতে বুধবার রক্তদান শিবিরে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) সরব হলেন অভিনেতা তথা তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের বিধানসভায় জমা দেওয়া ৬ লক্ষ টাকার বিল নিয়ে। সুকান্ত মজুমদারের দাবি, “গরীব মানুষের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় বলেন স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে। কিন্তু একজন বিধায়ক কীভাবে জনসাধারণের করের টাকা ব্যবহার করে ৬ লক্ষ টাকার বিল করেন, সেটি মুখ্যমন্ত্রীকে স্পষ্ট করতে হবে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড যদি ঠিকমতো কাজ করতো, তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না।”
কাঞ্চন মল্লিকের মেয়ে জন্মানোর পর হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ হিসেবে এই বিলটি জমা পড়েছে। এ প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমরা কাঞ্চন মল্লিককে শুভেচ্ছা জানাই তার কন্যা সন্তানের জন্য। কিন্তু কন্যা সন্তান জন্মানোর খরচ হিসাবে জনসাধারণের ৬ লক্ষ টাকা অপচয় করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে প্রশ্ন
সুকান্ত মজুমদার সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “যদি স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এতটাই কার্যকর হয়, তবে বিধায়করা কেন এই কার্ড ব্যবহার করতে পারছেন না? সাধারণ গরীব মানুষের জন্য যখন এই কার্ড, তখন বিধায়কদের ক্ষেত্রে কেন এটি কার্যকর নয়?” সুকান্তের মতে, এই ঘটনা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা আক্রমণ
সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্যের জবাবে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সুর চড়িয়ে বলেন, “সুকান্ত একটা ফচকে ছেলে। কাঞ্চন মল্লিকের কোনো দোষ আমি এখানে দেখি না। নার্সিংহোম বিল করেছে, এতে কাঞ্চনের কী দোষ? ডাক্তাররা যদি খরচ বাড়িয়ে দেন, সেটা তো কাঞ্চনের নিয়ন্ত্রণে নেই।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “সুকান্ত মজুমদার জানেন না, বিধায়করা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পান না। এই অজ্ঞতা থেকে এমন মন্তব্য করেছেন। একজন বিধায়ক বা সাংসদ যখন কোনো পরিষেবা নেন, তার বিল বিধানসভা বা সংসদের মাধ্যমে মেটানো হয়। এখানে ব্যক্তিগত লাভের কোনো প্রশ্ন নেই।”
রাজনৈতিক সংঘাত বাড়ছে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে। সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় বড় করে দেখালেও বাস্তবে এটি বিধায়কদের ক্ষেত্রেও কার্যকর নয়। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এটি নিয়ম মেনেই হয়েছে এবং কাঞ্চন মল্লিকের দোষারোপ করার কোনো যুক্তি নেই।
বিতর্কের গভীরতা
রাজনীতিবিদদের এই বিতর্কে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রকৃত কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, বরং জনসাধারণের টাকাপ্রয়োগ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরেও এটি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত এই বিতর্ক কোন দিকে মোড় নেবে, তা দেখার বিষয়। তবে সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য এবং তৃণমূলের পাল্টা জবাব রাজ্য রাজনীতির উত্তাপ বাড়িয়ে তুলেছে।