মায়ানমারে (Myanmar) গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের পর থেকে দেশটির পরিস্থিতি ক্রমশ আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (Arakan Army) মায়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গনের কাছে থান্ডওয়ে নৌঘাঁটি দখল করেছে। এই ঘটনাটি মায়ানমারের সামরিক এবং প্রশাসনিক অবস্থানকে নতুন করে চ্যালেঞ্জ করছে।
Big Breaking: এবার সীমান্ত পেরিয়ে এয়ার স্ট্রাইক পাকিস্তানের
গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চির সমর্থকরা যে স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ (NUG) গঠন করেছেন, তাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাবতী’ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে। তাদের দাবি, আরাকান আর্মির যোদ্ধারা শুধু থান্ডওয়ে নৌঘাঁটি দখল করেনি, বরং কাছাকাছি অবস্থিত গাওয়া শহরও তাদের কব্জায় চলে গেছে। এই দুটি স্থান মায়ানমারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেগুলি সামরিক এবং প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে কৌশলগতভাবে মূল্যবান।
ইরাওয়াদী নদী সংলগ্ন অঞ্চলটি সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকেই ইয়াঙ্গন এবং দেশের রাজধানী নেপিডো দিকে প্রবাহিত সড়ক এবং রেলপথ গিয়েছে। আরাকান আর্মি এর আগে কায়কতাও নৌঘাঁটি দখল করেছিল, তবে এবার তারা ইয়াঙ্গনের অদূরে পৌঁছে গেছে, যা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের জন্য একটি বড় অর্জন। এর মাধ্যমে, তারা শুধুমাত্র মায়ানমারের সামরিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, বরং দেশটির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দখলের দিকে এগোচ্ছে।
ইউনুস জমানায় বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও তোলাবাজি
এটা লক্ষণীয় যে, গত ১৩ মাসের গৃহযুদ্ধে এই প্রথমবারের মতো আরাকান আর্মি ইরাওয়াদী অববাহিকায় অনুপ্রবেশ করেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ, যা তাদের শক্তি ও প্রভাবের বিস্তার নির্দেশ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি বিদ্রোহীরা এই অঞ্চলের ওপর তাদের দখল আরও শক্তিশালী করতে পারে, তবে তা মায়ানমারের বর্তমান সামরিক শাসনের জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
‘দ্য ইরাবতী’ আরও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী একত্রে মায়ানমারের সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে আরও আক্রমণ শানাতে পারে। সুতরাং, কেবল সামরিক অবস্থানগুলোর দখল নয়, বরং রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিদ্রোহীদের যৌথবাহিনীর গঠনও আগামী দিনগুলিতে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।
এই সামরিক অবস্থান দখল ও বিদ্রোহীদের বিস্তার দেশটির সামরিক শাসক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বড় ধরনের সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। মায়ানমারে বিদ্রোহীদের শক্তিশালী হয়ে ওঠা এবং তাদের বিভিন্ন কৌশলগত স্থান দখল করে নেওয়া, তা দেশটির ভবিষ্যত রাজনৈতিক পথকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একদিকে, সামরিক শাসকরা তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে এই শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
লাদাখে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন ‘বিশ্বাসঘাতক’ চিনের, ভারতকে মার্কিনি সতর্কতা
এমনকি, ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ও সেনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সমর্থন বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চাচ্ছে। তবে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির অগ্রগতি এবং সামরিক শক্তি তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন, যদি বিদ্রোহীরা ইয়াঙ্গন এবং নেপিডো দিকে আরও এগিয়ে যায়, তবে তা মায়ানমারের পরিস্থিতিকে আরও জটিল এবং বিপজ্জনক করে তুলবে।